মোল্লা আলী কারী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলোর মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আত্মশুদ্ধি।’ যদি অন্তর ঠিক হয়ে যায়, তাহলে গোটা শরীর সুস্থ থাকে, এমটাই হাদিসের ভাষ্য। প্রতিটি মানুষের জন্য আত্মশুদ্ধি প্রয়োজন। আপনি যে কোনো পেশার হতে পারেন, যে কোনো বয়সের হতে পারেন, আপনার আত্মশুদ্ধি বা ইসলাহে নফসের প্রয়োজন রয়েছে। এর বিকল্প নেই। ইসলাহে নফস বা আত্মশুদ্ধির খুটিনাটি সব ধরনের বিষয় বইটিতে উপস্থাপন করা হয়েছে অত্যন্ত সাবলীল ভাষায়। আটটি অধ্যায়ে বইটি সাজানো হয়েছে। রয়েছে প্রতিটি আয়াত ও হাদিসের হাওয়ালা। মাদরাসা শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে প্রত্যেক মানুষের উপযোগী করে বইটি গ্রন্থিত হয়েছে। বিশেষ করে মাওয়ায়েজিনদের জন্য বইটি নিজের আত্মশুদ্ধি ও মানবসমাজের আত্মশুদ্ধির দিকে আহ্বান করার বিভিন্ন কৌশল জানতে পারবেন। অষ্টম অধ্যায়ে রয়েছে ওযিফাতুস সালেকিন, অর্থাৎ যারা নিজের আত্মশুদ্ধির পাশাপাশি সুন্নাহ মোতাবিক বিভিন্ন আমল করতে চান, তাদের জন্য রয়েছে দৈনন্দিনের বিভিন্ন মামুলাত। আপনি কেন আত্মশুদ্ধি করবেন, সেই সম্পর্কে আলোচিত হয়েছে প্রথম অধ্যায়ে। দ্বিতীয় অধ্যায়ে জানতে পারবেন আপনার ভেতর কী কী বদ আমল বা খারাপ গুণের উপস্থিতি আছে। তৃতীয় অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে আপনার ভেতর নেক আমল বা উত্তম গুণ সম্পর্কে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অধ্যায় পড়ার সময়ে মনে হবে আপনি আপনার ভেতরে সফর করছেন। সফরকালে দেখে দেখে যাচ্ছেন কী রয়েছে আপনার মন্দ দিক এবং কী রয়েছে আপনার ভালো দিক? চতুর্থ অধ্যায়ে রয়েছে ইখলাস বা নিয়ত বিশুদ্ধতা সম্পর্কে, আপনি একটি কাজ করছেন, অথচ নিয়তের কারণে সেটি হতে পারে ভালো কিংবা মন্দ, তাই নিয়ত হতে হবে পরিশুদ্ধ। পঞ্চম অধ্যায়ে আত্মশুদ্ধির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সবিস্তার আলোচিত হয়েছে। ষষ্ট অধ্যায়ে রয়েছে আত্মশুদ্ধির জন্য সোহবত কেন জরুরি। এই অধ্যায়ের অধীনে রয়েছে বাইয়াত কেন হতে হবে, বাইয়াত হওয়ার হুকুম কী, কার সোহবতে থাকতে হবে, তাকওয়া বা খোদাভীতি কি? কিংবা তাওয়াজু বা বিনয়ী হওয়ার গুরুত্ব। সপ্তম অধ্যায়ে রয়েছে সুন্নতের আলোকিত পথ। যে পথে হাঁটলে আপনার আত্মশুদ্ধি পূর্ণাঙ্গ হবে। শেষ অধ্যায়ে রয়েছে ওযিফাতুস সালেকিন বা বিভিন্ন দৈনন্দিনের মামুলাত। বইটি সম্পর্কে লেখক বলেছেন, শারীরিক ব্যাধির চিকিৎসায় যেমন ডাক্তার প্রয়োজন, তেমন আত্মিক ব্যাধির আরোগ্যেও প্রয়োজন চিকিৎসক। নফস মানুষের চিরশত্রু। যারা নফসকে পরাস্ত করার কৌশল রপ্ত করেছেন, তাদের দিক-নির্দেশনা অনুসরণ ও সাহচর্য অবলম্বন করলে ধীরে ধীরে নিজ নফসও দূর্বল হয়ে পড়ে। এটিই আত্মশুদ্ধির মূল কথা। এ কারণেই আল্লাহওয়ালাগণ সোহবতে সালেহ ও বায়আতের প্রতি গুরুত্বারোপ করে থাকেন’। তিনি আরো বলেন, ‘আজকাল উলামা-তালাবার মধ্যে আত্মশুদ্ধি ও সোহবতে সালেহের গুরুত্ব দিন-কে-দিন কমছে। মাদরাসাগুলোতে ইলমের চর্চা ব্যাপকভাবে হলেও সে অনুপাতে হয় না ইসলাহে কলবের চর্চা। ফলে একদিকে যেমন ফারেগীন ছাত্রদের আমলি হালত কাঙ্ক্ষিত মানের না হওয়ায় সমাজের মানুষ তাদের থেকে কাঙ্ক্ষিত ফলও পাচ্ছে না, অন্যদিকে মাদরাসার অভ্যন্তরীন পরিবেশ থেকেও ক্রমশ রুহানিয়ত হারিয়ে যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে দুর্নামের বোঝা চাপছে নির্বিশেষে সকল আলেমের ওপর, এমনকি স্বয়ং ইলমে দ্বীনের ওপর। এ অবস্থা থেকে আশু উত্তরণ না ঘটলে এ অঞ্চলের দ্বীনি মাদারেস ও ওলামায়ে কেরামের ভবিষ্যৎ নিয়ে ঘোর শঙ্কা রয়েছে।’ উলামা-তলাবাসহ সর্বশ্রেণির মুসলমান ভাইবোনের প্রয়োজন সামনে রেখে ‘যাদুস সালেকিন : ইসলাহে নফসের পথ ও পাথেয়’ গ্রন্থটি রচিত হয়েছে। এতে আত্মশুদ্ধির গুরুত্ব ও তার পথ-পন্থা সম্পর্কে অল্পবিস্তর আলোকপাত করা হয়েছে। নফসের হামলা থেকে কেউ-ই নিরাপদ নয়। নফসের কখনও সম্পূর্ণ মৃত্যু হয় না, সাধনার ফলে সে সাময়িক নিস্ক্রীয় হয় মাত্র। কাজেই পীর ও মুরিদ সকলেরই নফসের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে’।