সুর আর ছন্দে গড়ে ওঠে ছড়া-সুরে সুরে হয়ে যায় পড়া, মানে সুর আর শ্রুতি গড়ে দেয় শিক্ষার ভিত্তি। অক্ষর চিনে বানান শিখে পড়ালেখা শুরু করা একটা দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। পড়ালেখা শেখার এই প্রক্রিয়া সহজে রপ্ত করার একটা আনন্দদায়ক পথ ছড়া পড়া। এই উপলব্ধিকে গুরুত্ব দিয়েই কালে কালে রচিত হয়েছে কালজয়ী ছড়া। শিশুদের কথা বলার গতি ত্বরান্বিত করার জন্যই মূলত সুর ও ছন্দের ব্যবহার। বাংলা ভাষার পঠন-পাঠনে যেসব বর্ণ অপরিহার্য প্রারম্ভিক পর্যায়ে-পরিচয় পর্বে-সেসব বর্ণ মিশে আছে এমন কিছু পরিচিত শব্দ ও বিষয় সুর আর ছন্দে গেঁথে দিয়ে এই বইয়ে শিশুমনে বাংলা বর্ণের যোগ সৃষ্টির প্রচেষ্টা করা হয়েছে। শিশুমনের আঙ্গিনায় বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত বর্ণের মিছিল যেন অবাধে যাত্রা করতে পারে এবং তারা যেন এসব বর্ণ প্রয়োজনে সহজে ব্যবহার করতে পারে। শব্দ তৈরিতে বর্ণের ব্যবহার অপরিহার্য-এই বাস্তবতা সামনে রেখেই বর্ণের ছড়া ও বর্ণ পরিচয় পুস্তক। ছড়া শুধু বর্ণিত বিষয়ের উপস্থাপন করে না, নতুন চিন্তারও উদ্রেক ঘটায়। ছড়া বিনোদনের উপকরণ যা শিশুর কাছে শিক্ষা নিয়ে যায় আনন্দযোগে। উপস্থাপিত উপকরণ যদি ব্যবহার্য বিষয়ের সাথে শিক্ষার্থীকে খানিক সম্পৃক্ত করে তবে শিক্ষার্থী বাকিটুকু নিজেই রপ্ত করে নিতে পারে। বাক্যই ভাষার প্রাণ। ছন্দোবন্ধ বাক্যে বিষয় বর্ণনার সঙ্গে বর্ণিত বিষয়ের পূর্ণাঙ্গ আকৃতি বা অবয়ব উপস্থাপিত হলে শিশু-কিশোরেরা বিমোহিত হয়। খেলার ছলে পড়া, অন্যের মুখে শোনা, অক্ষর চেনা, বাক্যের সাথে পরিচিত হওয়া প্রভৃতি পদক্ষেপ বিষয়ভিত্তিক পরিবেশের সাথে পরিচিত হতে সহায়তা করে; তাদের পুরো বিষয়ের অবয়ব চেতনায় ছাপ ফেলে, সমৃদ্ধ করে স্মৃতি। সবচেয়ে বড় কথা, এই পদ্ধতি শিশু-কিশোরমনে প্রশ্নের উদ্রেক করে, জানার আগ্রহ বাড়ায়, এক কথায় খুলে দেয় ভাবনার দুয়ার। এভাবেই তাদের চিন্তাশক্তির বিকাশ ও স্মৃতিশক্তির উন্নয়ন ঘটে। আদর্শ শিক্ষা উপকরণ স্মৃতিশক্তির উন্নয়নে আর চিন্তার বিকাশে সহায়ক। এ পর্যায়ে এটাই শিশু-কিশোর শিক্ষার মূল অনুপ্রেরণা। এই অনুপ্রেরণাই ওদের এগিয়ে নেয় জীবন ও জগতের আকর্ষণে-পড়াশোনার বিশাল জগতে। শিশু-কিশোরদের উৎসুক মনে আকর্ষণ সৃষ্টিই আদর্শ উপকরণের মর্মকথা। এসব বিবেচনায় রেখে বর্ণের ছড়া ও বর্ণ পরিচয় পুস্তকে প্রতিটি বর্ণ দিয়ে লেখা হয়েছে ছন্দোবদ্ধ ছড়া, বর্ণিত বিষয়ের অবয়ব যুক্ত করা হয়েছে এবং নির্দেশ করা হয়েছে প্রতিটি বর্ণের উৎপত্তিস্থল আর অবস্থান। শিশু-কিশোরদের শেখার ক্ষমতা অনেক, বিচরণক্ষেত্র বিশাল, মনের আঙ্গিনা সীমাহীন-বন্ধনমুক্ত। নিত্যনতুন চিন্তা এবং গ্রহণক্ষমতা বড়দের তুলনায় অনেক বেশি শিশুদের। ছড়া তাদের মুক্তচিন্তার সহায়ক শক্তি।
শাওয়াল খান জন্ম ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৬। মহেশখালি, ককসবাজার। পিতা: কলিম উল্লাহ খান, মাতা: মুস্তাফা খান। ১৯৮৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযােগাযােগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকাল থেকেই তিনি ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকতা ও সৃজনশীল লেখালেখি করে আসছেন। বাংলা একাডেমী পরিচালিত তরুণ লেখক প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৬ সালে বাংলা একাডেমী থেকে অক্টোপাস নামে তার একটি গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ইংল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে CROSS CULTURAL STUDIES বিষয়ের পাঠ্যবই THE SCARLET THREAD: AN INDIAN WOMAN SPEAKS 01 অনুবাদে রাঙাডােরা নামে ২০০২ বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে রাঙাড়ােরা সমাজকল্যাণ ও সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে সহায়ক গ্রন্থ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তার বেশ কিছু প্রবন্ধ দেশের বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। সেসব থেকে বাছাইকৃত শিক্ষাবিষয়ক প্রবন্ধ নিয়ে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা, সাক্ষরতা ও সাক্ষরতা উত্তর অব্যহত শিক্ষা বিষয়ক গবেষণামূলক গ্রন্থ শিক্ষা জগৎ বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশের (বর্তমানে যন্ত্রস্ত) অপেক্ষায় আছে। তাঁর অনুবাদে চীনা উইগার মুসলিমদের উপকথা আফেন্দি নাসিরুদ্দিনের বুলিগল্প পুস্তকাকারে প্রকাশের পথে। বর্তমানে দৈনিক নয়া দিগন্তে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। এছাড়াও প্রকাশের অপেক্ষায় আছে শিক্ষাবিষয়ক গবেষণামূলক গ্রন্থ শিক্ষার চাহিদা ও শিক্ষার যােগান। শাওয়াল খান সরকারি ও বেসকারি পর্যায়ে পরিচালিত উপানুষ্ঠানি শিক্ষা কার্যক্রম তথা অব্যাহত শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে দেড় যুগ ধরে। সম্পৃক্ত। তিনি ছড়া, সাহিত্য ও কথা সাহিত্য রচনার পাশাপাশি বর্তমানে শিশুশিক্ষা ও নারীশিক্ষা এবং অব্যাহত শিক্ষা গবেষণায় নিয়ােজিত। এছাড়াও মার্কিন সাম্রাজ্য পতনের পরে, ব্রেইন চাইল্ড, বিশ্ব সংস্কৃতি এবং গ্রিমভাইদের রচনাবলী অনুবাদ করেছেন।