তারাশঙ্কর রবীন্দ্র সান্নিধ্যে উপনীত হবেন—এ অত্যন্ত স্বাভাবিক কিন্তু কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে সন্তানসম সাহিত্যিক তারাশঙ্করের সাহিত্য পাঠে কাব্যদৃষ্টিতে নবচিন্তার রসদ পাবেন তারাশঙ্কর অনুপ্রাণিত হয়ে উঠবেন এ আমাদের কাছে বড় বিস্ময়ের মনে হয়। তেমনি সাহিত্যিক শৈলজানন্দকে অনুসরণ করেই তারাশঙ্কর যে নতুন পথের দিশা পেয়েছিলেন—এ কথা তিনি নিজেই জানিয়ে গিয়েছেন। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের মুখোমুখি হওয়ার মধ্য দিয়ে তারাশঙ্করের জাতীয় চিন্তা ও চেতনার বিষয়টি উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। গান্ধীবাদী তারাশঙ্কর কেন বামশিবিরে যুক্ত হয়েছিলেন আবার কেনই বা সেখান থেকে তিনি সরে আসেন তারও অনুসন্ধান করতে চেয়েছি আমরা। তেমনি বাংলা ভাষা এবং অসমে অত্যাচারিত বাঙালির জন্য তারাশঙ্করের মসীযুদ্ধ; বিদেশে সাহিত্য সম্মেলনে ছত্রিশটি দেশের বিরুদ্ধে তারাশঙ্কর কিভাবে ভারতীয় সাহিত্য ও সংস্কৃতির পক্ষে মুখোমুখি ভয়ঙ্কর লড়াই করেছিলেন তার এক বিশেষ অনুসন্ধান এখানে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। কোন মুখাপেক্ষি হয়ে বিধান পরিষদের সদস্য তারাশঙ্কর কাশী গিয়েছিলেন, কার এবং কিসের মুখাপেক্ষি হয়ে তিনি রামায়ণ গবেষণায় রত হয়েছিলেন – এই সব ভিন্নমাত্রিক বিচিত্র বিষয় নিয়ে নিবন্ধগুলি রচিত হয়েছে।
গ্রাজুয়েট এবং পোস্ট গ্রাজুয়েট স্তরে অধ্যাপনার অভিজ্ঞতা সহ লেখক প্রায় তিন দশকের গবেষক। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এম. এ. এবং পি.এইচ.ডি। ১৯৯০– ১৯৯২ পর্বে এম. এ. করার পর বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অধ্যাপক ড. অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য মহাশয়ের কাছে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সাহিত্য বিষয়ে বিশেষ পাঠ শুরু হয় এবং পরে ২০০৪ সালে ‘তারাশঙ্করের কথাসাহিত্যে বাস্তবের নরনারী' বিষয়ে পি. এইচ. ডি. উপাধি প্রাপ্ত হন। রাজ্যে এবং ভিন্ন রাজ্যে বিশিষ্ট বক্তা হিসেবে খ্যাত এই লেখকের বহু গ্রন্থ এবং গবেষণামূলক প্রবন্ধ ইতিপূর্বে প্রকাশিত হয়েছে। তিন দশক যাবৎ কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন ও সাহিত্য নিয়ে তিনি গবেষণা করে চলেছেন। তারাশঙ্কর গবেষক হিসেবে তিনি ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রকে সিনিয়ার ফেলো নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাঁর রচিত দীর্ঘ তারাশঙ্করজীবনী এবং সম্পাদিত তারাশঙ্কর পত্রসমগ্র প্রকাশের পথে। ‘মুখোমুখি তারাশঙ্কর’ তাঁর পঞ্চম গ্রন্থ।