‘ অনন্য জীবনানন্দ ‘ গ্রন্থে জীবনানন্দের উপন্যাস এবং জীবনানন্দের গল্পগত, এই দুটিই মূল প্রবন্ধ। তার প্রায় সমগ্র কথাসাহিত্য অনুশীলন করে, কাব্য-সাহিত্যকে তার প্রেক্ষাপটে রেখে, জীবনানন্দের বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিগুলি স্বতন্ত্রভাবে আবিষ্কারের চেষ্টা করেছেন লেখক, যার ফলশ্রুতি অন্যান্য প্রবন্ধগুলি। তার সেইসব দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে কথাসাহিত্য থেকে বিশেষ উদ্ধৃতিগুলি হয়ত প্রয়ােজনে পুনরাবৃত্ত হয়েছে বিভিন্ন প্রবন্ধে। রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কাব্যসাহিত্যে অনেক মহারথীর আবির্ভাব ঘটেছিল, যার অন্যতম ছিলেন কবি জীবনানন্দ দাশ। কবির জীবিতকালেই তার কাবাদীপ্তি অনেককে চমকিত, কাউকে কাউকে বিরক্তও করেছিল, যদিও সেই দীপ্তির প্রসারণ বা অন্তর্ভেদিতা সম্পর্কে যথার্থ ধারণা তাদের অনেকেরই ছিল না, সন্তবত কবির নিজেরও ছিল না। ফলে সমস্ত জীবন ধরে তাকে সংশয়ে থাকতে হয়েছে। জীবিতকালে তাে বটেই, তার মৃত্যুর পরেও কয়েক দশক সেই সংশয় আচ্ছন্ন করে রেখেছিল পাঠক-গবেষক-সমালােচকদেরও। বস্তুত, সময়েরই আছে সেই ক্ষমতা, যে তার নির্মোহ গতির সাহায্যে, প্রকৃত দীপ্তির ওপর লৌকিক যে মলিনতা জমা করে, তা অপবৃত করে সেই দীপ্তি পৌছে দেয় পাঠকের হৃদয়ে। পাঠকের মন তখন উদ্বুদ্ধ হয়ে নতুনভাবে তা আবিষ্কার করে। সেই অলাকিক সময়ের হাত ধরেই জীবনানন্দের যাবতীয় সাহিত্যকৃতি, সমস্ত সমালােচকদের ভুল প্রমাণ করে, পাঠকের সবরকম সংশয় দূর করে, তার জন্মশতবর্ষের আগেই পাঠক-হাদয়ে মহার্ঘ্য স্থানটি দখল করে নিয়েছে।