দশ বছরের মেয়ে সুমাইয়া। সুযোগ পেলেই সে তার দাদা-দাদুর সাথে ভাব জমিয়ে চুটিয়ে গল্প শোনে। যে বয়সে বুড়োদের কোনো কাজ করার থাকে না সে বয়সে তারা শিশুদের সাথে খাতির জমিয়ে গল্প করে সময় কাটাতে চায়। এ সুযোগটা সুমাইয়া দাদা-দাদুর সাথে ভাগ করে নিয়েছে। মনোযোগী শ্রোতা হিসেবে বেজায় কদর তার। সুমাইয়ার দাদা-দাদু বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনাতে পছন্দ করেন বেশি। সুমাইয়ারও মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনতে ভীষণ পছন্দ। কারণ, এগুলো তো কোনো রূপকথার গল্প নয়; একদম বাস্তব সত্য ঘটনা। এতে আনন্দ-বেদনা আর বীরত্বের বহু কাহিনী আছে। গল্প শুনতে শুনতে তার মনের ভেতরে যুদ্ধসময়ের নানা ঘটনা জীবন্ত হয়ে ওঠে। মুক্তিযুদ্ধটা স্বচক্ষে দেখতে পারেনি বলে সুমাইয়ার খুব আক্ষেপ হয়। সে মনে মনে ভাবে, এখন যদি যুদ্ধ হতো আমি নিশ্চয়ই বন্দুক নিয়ে যুদ্ধ করতে যেতাম! গুলি করে শত্রুদের বুক ঝাঁঝরা করে দিতাম। গুলি খেয়ে শত্রুরা যখন মাটিতে পড়ে লুটোপুটি খেতো তখন খুব আনন্দ হতো আমার। মনে মনে মুক্তিযোদ্ধা হয়ে সে বহুবার যুদ্ধ করে বহু সৈন্য মেরেছে, বহুবার স্বাধীন করেছে দেশটা। তার মনে একটা দুঃখ বারবার জেগে ওঠে, সেটা হল সে এখনও কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে দেখেনি। সে তার বাবার কাছে আফসোস করে প্রায়ই তার এই দুঃখের কথা বলে। তার বাবা তার মনের কথাগুলো বেশ বুঝতে পারেন। একদিন তার বাবা তাকে বললেন, মুক্তিযুদ্ধ দেখনি তো কী হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা তো দেখতে পারো, যাঁরা তখন বীরের মত যুদ্ধ করে এ দেশটা স্বাধীন করেছেন। সুমাইয়া আনন্দে লাফিয়ে উঠে বলে, বাবা আমি মুক্তিযোদ্ধা দেখবো!