ডা. জাকির নায়েক— সুবিদিত এই নামটি নতুন কোনো পরিচয়ের মুখাপেক্ষী নয়। এই সূর্যমনীষী বিশ্বের এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত আলো বিলি করেন। তিনি আলোর ফেরিওয়ালা। তাঁর স্নিগ্ধ আলোয় আলোকিত হয়ে চলেছে পুরো বিশ্ব। তাঁর আকুতি লাখো-কোটি মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করে। তাঁর দাওয়াতে হাজারো অমুসলিম শাশ্বত সত্যের দিশা খুঁজে পায়। বর্তমান বিশ্বে তাঁর চেয়ে অধিক খ্যাতিমান ও তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের (Comparative Religion) ওপর সুদক্ষ আর কোনো দাঈ আছেন কি না এবং থাকলেও তাঁর মতো এত অধিক স্বীকৃতি লাভ করেছেন কি না সন্দেহ রয়েছে। পাশ্চাত্য সভ্যতার আগ্রাসন, অমুসলিম মিশনারি ও পণ্ডিতদের অপতৎপরতা এবং মুসলিম-বিশ্বে চিন্তাগত ধর্মত্যাগ মোকাবেলায় অনন্য-সাধারণ ভূমিকা পালনের ক্ষেত্রে ‘অধিনায়কে’র শিরোপা তাঁকেই শোভে। অন্ধকারের পূতিগন্ধময় এই সময়ে তাঁর প্রাজ্ঞ জবানে রচিত হয়ে চলেছে সত্যসুবাসিত আলোর মিনার। বাতিলের প্রবল বাধা মাড়িয়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে তাঁর দাওয়াতি কর্মতৎপরতা। মহান এই দাঈর জীবনের গল্প জনার জন্য উন্মুখ হয়ে ছিল তাঁর লাখো-কোটি ভক্ত, অনুরক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষী। কিন্তু লৌকিকতা বা গর্ব-অহংকার প্রকাশ পাবে— এই ভয়ে কখনো তিনি মানুষের সামনে তাঁর জীবনের গল্প বলেননি। অবশেষে মালয়েশিয়ার একজন বরেণ্য আলেমের জোর অনুরোধে এক অনুষ্ঠানে তিনি তাঁর জীবনের গল্প উপস্থাপন করেন। ‘বহমান জীবনের স্রোতধারা’ সেই বক্তৃতারই অনুবাদ। তরুণ অনুবাদক আম্মারুল হক ভাব ও বক্তব্যমালাকে যে আঙ্গিকে উপস্থাপন করার প্রয়াস পেয়েছেন তা প্রশংসনীয়। তাঁর অনুবাদের ধারা আধুনিক, ঝরঝরে ও সাবলীল। এই বইয়ে ফুটে উঠেছে ডা. জাকির নায়েকের অনন্য ঈমান, ইখলাস ও আমলের আলো-ঝলমলে যাপিত জীবন। এ বইয়ের পাতায় পাতায় অবলোকন করবেন দীনের জন্য তাঁর কী অনন্য-সাধারণ ত্যাগ-তিতিক্ষা! আল্লাহু আকবর! এ বই একজন তোতলা থেকে বিশ্বখ্যাত ইসলামিক বক্তা হওয়ার গল্প। বহু বরেণ্য ইসলামিক স্কলারের সান্নিধ্য-সৌরভে থেকে ইলম অর্জনের আখ্যান। এতে আছে এ-যুগের দাঈদের জন্য শিক্ষার অনন্য উপকরণ। তাঁর হিজরতের শিক্ষাটাও গ্রহণ করার মতো। এই জীবনগল্পে উঠে এসেছে তাঁর ঈমানদীপ্ত দর্শন, সময়োচিত চিন্তাধারা, জীবনের সুদীর্ঘ সাধনা ও গবেষণার অনিন্দ্য-সুন্দর বর্ণনা। তাঁর বর্ণনায় ছিল চিন্তার প্রসারতা, বক্তব্যের মর্মগভীরতা, দিলের দরদ ও আত্মার উত্তাপ। এ বইয়ে তাঁর জীবনগল্পের পাশাপাশি সংকলিত হয়েছে তাঁর ফিকহি দৃষ্টিভঙ্গি। যে বিষয়টি নিয়ে ইতিপূর্বে বহু সমালোচনা হয়েছে। এই বক্তব্যে তাঁর ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে। আরও রয়েছে তাঁর সম্পর্কে কয়েকজন তরুণ আলেমের গুরুত্বপূর্ণ কিছু লেখা। চিন্তাপত্র প্রকাশন ‘বহমান জীবনের স্রোতধারা’ বইটির মাধ্যমে তার অগ্রযাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে। আমরা মনে করি, ডা. জাকির নায়েকের বর্তমান অবস্থান—মধ্যপন্থী। আগের গোঁড়া ফিকহি দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তাঁর ইউটার্ন প্রশংসার্হ। উম্মাহর প্রতি তাঁর দরদ ও ব্যথা এবং দাওয়াতি কাজে তাঁর শ্রম ও নিষ্ঠা ধন্যবাদার্হ। তাই মজলুম দরদি এই দাঈকে আধুনিক শিক্ষিত ভাই এবং আগামী দিনের দাঈদের সামনে তুলে ধরা অতি জরুরি। আমরা বিশ্বাস করি, এ বই পাঠকের চিন্তালোক ও হৃদয় জগৎ দীপিত-উদ্দীপিত করবে, প্রাণিত ও অনুপ্রাণিত করবে। বইটি সাদরে গ্রহণ করলেই আমাদের শ্রম-সার্থক বিবেচনায় আনতে পারি।
আম্মারুল হক। জন্মগ্রহণ করেছেন ১৯৯৯ সালের ৫ মে চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত বাঁশখালী থানায়। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে সম্পন্ন করেছেন কুরআনুল কারীমের হিফজ। এরপর কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ ডিগ্রী তাকমিল সম্পন্ন করেছেন চট্টগ্রামের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম, হাটাহাজারী মাদ্রাসায়। মাদরাসায় পড়াশোনার পাশাপাশি পড়েছেন জেনারেল ধারায়ও। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি সম্পন্ন করে বর্তমানে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত আছেন। তরুণ উদীয়মান এই লেখক ও চিন্তক ইতিমধ্যেই সাড়া ফেলেছেন বইজগতে। তার রচিত, অনুদিত ও সম্পাদিত বই দশের ঘর ছাড়িয়েছে। একাধিক বিষয়ে কাজ করলেও তিনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন গবেষণাধর্মী লেখায়।