“ইতিহাস এমন এক আয়না, যেখানে সত্যের চশমা পরে সত্যকে দেখা যাবে, মিথ্যার চশমা পরে মিথ্যাকে দেখা যাবে। ইতিহাসের নিজস্ব ভাষা কী? ইতিহাসের কোনো ভাষা নেই। শুধু চোখ আছে। ইতিহাস অনেক কিছুর সাক্ষী হয়। বলার দায়িত্ব নেয় অন্যরা। তাদের সততার উপর ভিত্তি করেই রচিত হয় ইতিহাসের প্রামাণ্যতা। “ইতিহাসের আয়নায় ইহুদি-খ্রিষ্টান শুধু ইতিহাসবর্ণনা নয়, এ যেন কালের জবানবন্দি। শতাব্দি আগে নিঃশেষিত কাহিনীর জীবন্ত উপস্থাপনা। এক রত্তি মিথ্যা নয়; এ ইতিহাসের বর্ণনাকারী স্বয়ং আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়াতাআলা। এ ইতিহাসের সংরক্ষক ‘আলআমিন’ খেতাবে ভূষিত রাহমাতুললিল আলামিন সাইয়িদুল মুরসালিন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। কুরআন ও সুন্নাহয় ইহুদি খ্রিষ্টানের ইতিবৃত্ত নাতিদীর্ঘ বর্ণনায় বিধৃত হয়েছে। তার ওপর ভিত্তি করে এই দুই সম্প্রদায়ের কাছে সংরক্ষিত পবিত্র গ্রন্থের বাগাড়ম্বরের সুলুকসন্ধান করেছেন সূক্ষ্মদর্শী লেখক। সত্য ও বিকৃতির যুগপৎ এনকোয়ারির একটা চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়েছে এই বইতে। তাই এটি আপনার ধারণায় বিলক্ষণ পরিবর্তন এনে ঈমানের প্রশান্তি বাড়িয়ে দিবে। কোনো সাধারণ রচনা নয় এটা, দীর্ঘ অধ্যবসায়ের প্রয়াসলব্ধ সাধনাফল, এটি লেখকের অনবদ্য সৃষ্টি। বইটি লুফে নিতে পরবর্তী বিচারটুকু পাঠকের যিম্মায়”।
আল্লামা ইবনু কাইয়্যিমিল জাওযীয়া (রহঃ) ছিলেন ইসলামী চিন্তাবিদ, ফকিহ, তাফসীরবিদ, হাদীসজ্ঞ এবং চিকিৎসাশাস্ত্রের পণ্ডিত। তাঁর পূর্ণ নাম ছিল আবু আব্দুল্লাহ্ শামসুদ্দ্বীন মুহাম্মাদ বিন আবু বকর বিন আইয়্যুব আদ দিমাশকী। তিনি ৬৯১ হিজরী সালে দামেস্কে জন্মগ্রহণ করেন এবং তাঁর পিতা দীর্ঘ দিন দামেস্কের আল জাওযীয়া মাদ্রাসার তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন বলেই তাঁর পিতা আবু বকরকে قيم الجوزية কাইয়্যিমুল জাওযীয়াহ অর্থাৎ মাদরাসাতুল জাওযীয়ার তত্ত্বাবধায়ক বলা হয়। পরবর্তীতে তাঁর বংশের লোকেরা এই উপাধীতেই প্রসিদ্ধি লাভ করে। ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমীয়া (রহঃ)-এর স্নেহধন্য শিষ্য ছিলেন এবং শাইখের মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি তাঁর সাথেই ছিলেন। এমনকি জিহাদের ময়দান থেকে শুরু করে জেলখানাতেও তিনি তাঁর থেকে আলাদা হননি। তিনি ইসলামী আকীদাহ, তাওহীদ, সুন্নাহ ও বিদআত-বিরোধী বিভিন্ন বিষয়ে খ্যাতি অর্জন করেন। তার মধ্যে তাওহীদ ও সুন্নাহের প্রতি অগাধ ভালোবাসা, বিদআতের বিরুদ্ধে সংগ্রাম এবং ইবাদত-বন্দেগীতে নিষ্ঠা ছিল অন্যতম। ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) কিছু উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে:
"যাদুল মা‘আদ ফী হাদ্য়ী খাইরিল ইবাদ"
"মাদারিজুস সালিকীন"
"শিফাউল আলীল"
"তিবেব নববী" (চিকিৎসাশাস্ত্রে তাঁর অনন্য অবদান)
তাঁর উস্তাদ বৃন্দ -
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) যে সমস্ত আলেম-উলামার কাছ থেকে তালীম ও তারবীয়াত হাসিল করেন, তাদের মধ্যে রয়েছেনঃ
শাইখুল ইসলাম আল্লামা ইবনে তাইমীয়াহ (রহঃ)।
আহমাদ বিন আব্দুদ্ দায়িম আল-মাকদেসী (রহঃ)।
তাঁর পিতা কাইয়্যিমুল জাওযীয়াহ (রহঃ)।
আহমাদ বিন আব্দুর রহমান আন্ নাবলেসী (রহঃ)।
তাঁর ছাত্রসমূহ -
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) এর হাতে যে সমস্ত মনীষী জ্ঞান আহরণে ধন্য হয়েছিলেন, তাদের তালিকা অতি বিশাল। তাদের মধ্যে রয়েছেনঃ
বুরহান উদ্দ্বীন ইবরাহীম বিন ইবনুল কাইয়্যিম।
ইমাম ইবনে রজব (রহঃ)।
হাফিয ইমাম ইবনে কাছীর (রহঃ)।
তিনি একজন নিরলস সাধক, যিনি দীর্ঘ সময় ইবাদত করতেন, বিশেষ করে তাহাজ্জুদ ও কুরআন তিলাওয়াতে মগ্ন থাকতেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর ইলমী ও আধ্যাত্মিক খেদমত মুসলিম উম্মাহর জন্য অমূল্য দান হয়ে রয়েছে। ইবনুল কাইয়্যিম ৭৫১ হিজরী সনে মারা যান এবং দামেস্কের বাবে সাগীর গোরস্থানে তাঁর পিতার পাশে দাফন করা হয়।