মুক্তিসংগ্রামের সশস্ত্র পর্ব ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে হানাদার পাকিস্তানী সেনাবাহিনী এবং তাদের এদেশীয় সহযোগী (জামাত-রাজাকার গোষ্ঠী) কর্তৃক ধর্ষিত হয়েছিল দুই থেকে চার লক্ষ নারী! বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেসব নারীকে ‘বীরাঙ্গনা’ বলে বুকে টেনে নিয়েছিলেন। ধানমন্ডির নিজ বাড়ির ‘ঠিকানা’ দিয়েছিলেন সবাইকে। ১৯৭২ সালে অন্তসত্ত্বা বীরাঙ্গনাদের গর্ভে জন্ম নিয়েছিল ২৫ হাজার যুদ্ধশিশু; বাঙালি শরীরেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ! আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাসমূহের মাধ্যমে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স ও ডেনমার্কে দত্তকায়ন করা হয় সেসব যুদ্ধশিশুকে। বিস্ময়কর হলেও সত্য যে সেসব পবিত্র যুদ্ধশিশুরা আমাদের জাতীয় গাথায় বিস্মৃত! সারাবিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংঘটিত জেনোসাইড বা জাতিসত্তা ধ্বংসের অংশ হিসেবে পরিচালিত হয়েছে ‘পরিকল্পিত গণধর্ষণ’। ধর্ষণও একটি যুদ্ধাস্ত্র! যুদ্ধক্ষেত্র বিস্তৃৃত হয়েছে নারীর শরীর পর্যন্ত! এসব ধর্ষণের ফলে জন্ম হয়েছে যুদ্ধশিশুর। সারাবিশ্বে বেঁচে থাকা যুদ্ধশিশুর সংখ্যা প্রায় ৫ লক্ষ! বাঙালি জাতিসত্তা ধ্বংস করে ‘পাকি-বাঙালি’ শঙ্কর জাতিধারা প্রবর্তন করার লক্ষ্যে বর্বর ইয়াহিয়া খানের নেতৃত্বে পাকিস্তানী সামরিক-জান্তা বাংলাদেশে পরিচালনা করেছিল পরিকল্পিত গণধর্ষণ! বাংলাদেশ ও সারাবিশ্বে সংঘটিত গণধর্ষণ এবং যুদ্ধশিশু নিয়ে দেশি-বিদেশী অনেক ব্যক্তিবর্গই গবেষণা করে চলেছেন। বিশ্লেষণ করছেন বিচারের পথ - সমাধানের পথ। বর্তমানে ভিনদেশে বসবাস করা বাংলাদেশের যুদ্ধশিশুরা এখন ত্রিশোর্ধ পরিপূর্ণ মানুষ! লেখকের কয়েক বছরের নিরলস গবেষণা এবং তথ্যানুসন্ধানের ফসল এই গ্রন্থ যুদ্ধশিশু। এখানে বর্ণিত হয়েছে বাংলাদেশের যুদ্ধশিশু, তাদের জন্ম, অবস্থান, দত্তকায়ন, সামাজিক সঙ্কট, বিশ্বের যুদ্ধশিশু এবং অপরাধীদের বিচার-ভাবনা বিষয়ক হৃদয়স্পর্শী সত্যকথন - প্রবন্ধ, নিবন্ধ, তথ্য, কবিতা ও গান। ২০০৮ সনের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয় ১ম সংস্করণ একাত্তরের যুদ্ধশিশু; বইটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল (বাংলাদেশ) বা International Crimes Tribunal (Bangladesh) কর্তৃক সংশ্লিষ্ট বিচারের ক্ষেত্রে দাপ্তরিকভাবে গৃহীত হয়েছে। সময়ের স্রোতে আহরিত নানাবিধ তথ্যে সমৃদ্ধ হয়ে বর্ধিত কলেবরে, এবারে প্রকাশিত হতে চলেছে সংশোধিত সংস্করণ গবেষণা-গ্রন্থ যুদ্ধশিশু একাত্তরে অরুণোদয়ের অগ্নিস্বাক্ষী।