মুখবন্ধ এই খণ্ডে যে প্রবন্ধগুলি সংকলিত হল তার মধ্যে ‘দাম্পত্যের স্বরূপ' একটু ভিন্ন। এতে বিবাহের নানা দিক নিয়ে আলোচনা আছে, যা হয়তো এ সমাজেও খানিকটা প্রাসঙ্গিক। দু'টি প্রবন্ধ— ‘বেদে ক্ষুধা প্রসঙ্গ' ও ‘বেদে সংশয় ও নাস্তিক্য’– বেদ আশ্রিত। বহুকাল ধরে মানুষ বিশ্বাস করে এসেছে বেদের যুগে ক্ষুধার অনুপাতে খাদ্য পর্যাপ্ত ছিল। কিন্তু, ঘটনা হল খাদ্যের প্রার্থনায় মানুষ দেবতাদের কাছে মিনতি করে এসেছে, যজ্ঞ করেছে— কেননা খাদ্য সুরক্ষা ছিল অনিশ্চিত। আবার বেদের যুগেই মানুষ দেবতাদের উপর বিশ্বাসও হারাচ্ছিল— যজ্ঞ-অনুষ্ঠান কখনও কখনও ফলপ্রসূ হলেও, প্রায়শই হত না। সংশয় ও নাস্তিক্য চিরকালই নানা পরিমাণে মানুষের মনকে আচ্ছন্ন করে রাখত, কেউ স্বীকার করত, কেউ বা করত না। এমন কোনও যুগ ছিল না যখন মানুষ এ দু'টিকে সম্পূর্ণ বর্জন করতে পেরেছিল। মানুষের জীবনে বিশ্বাস, অবিশ্বাস, সংশয়, আত্মসমর্পণ নানা রূপে দেখা দেয়— নানা জটিল রূপ ধারণ করে। যখন সেটা সরল বিশ্বাস, তখন সেটা সাধারণ্যে অধিক গ্রহণযোগ্য, জটিল ব্যাপার কম জনপ্রিয়। এই আলোচনা আছে ‘আপেক্ষিক মূল্যায়নে রামায়ণ ও মহাভারত' প্রবন্ধে। মানুষ এ দুই মহাকাব্যকে গ্রহণ করেছে দু'টি পর্যায়ে— একটির কাহিনি সরল ও জনপ্রিয়, অন্যটি জটিল, কম জনপ্রিয়— কিন্তু অত্যন্ত চিন্তাপ্রণোদক। রামায়ণের সারল্যের বিপরীতে মহাভারতে নানা সামাজিক অসমতা ও নৈতিক সংকট নিয়ে যে জটিল বুনন তা পাঠকের মনকে প্রশ্নসমৃদ্ধ করে। এ লেখাগুলোতে উপস্থাপিত বক্তব্য আগে বিভিন্ন আকারে প্রকাশিত হয়েছে— ‘প্রবন্ধসংগ্রহ’তে অন্তর্ভুক্তিকালে যথাসম্ভব পরিমার্জন করার সুযোগ পাওয়া গেল। সংগ্রহ প্রকাশের যে দুঃসাহসিক ঝুঁকি গাঙচিল-এর শ্রীমতী অণিমা ও শ্রীঅধীর বিশ্বাস নিয়েছেন, তাতে তাঁদের ব্যবসাবুদ্ধির পরিচয় নেই, কিন্তু বুদ্ধিচর্চার প্রতি টানটা স্পষ্ট। শ্রীবিপুল গুহ-র সুন্দর প্রচ্ছদের জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। শ্রীঅমল দত্ত যে ধৈর্য ও যত্নের সঙ্গে অক্ষরবিন্যাসের কাজটি করেছেন, তার জন্য ধন্যবাদ শব্দটা খুবই ছোট। খণ্ডগুলো সম্পাদনার বিপুল শ্রমসাধ্য কাজটি কাঁধে তুলে নিয়েছে আমার ছাত্রকল্প শ্রীমান কুমার রাণা। তার জীবন আনন্দময় হোক।