সিটিজেন রেডিওটার এরিয়ালের কিছু অংশ ছিড়ে গিয়েছিল। বাবা অংশটুকু মেরামত করে ঘরের চালের উপরে উত্তর থেকে দক্ষিণে শক্ত করে বেঁধে দিয়েছেন। চিকন তারটা এসে বিশাল রেডিওটার ভেতর ঢুকে গেছে। এই রেডিও নামক বাক্সটার কান্ড দেখে অবাক তপু। ওর ভেতর থেকে খবর, গান, কলকাকলীসহ কত কিছু যে হয়! সারাগ্রামের মানুষ গোল হয়ে বসে শুনে। কিন্তু ব্যাটারী পাল্টানোর সময় তপু দেখেছে ভিতরে কোন মানুষ নেই। শুধু অদ্ভুত সব জিনিস আর তারের জটলা। বাবাকে জিজ্ঞেস করলে বাবা বলেন,“বড় হলেই বুঝতে পারবি”। তপু যে কবে বড় হবে কে জানে। বাবা আকাশবানী কলকাতা, বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা, রেডিও সিলোন, বিবিধ ভারতীও শুনেন। শুনেন খুব মনযোগ দিয়ে। দেশের অবস্থা নাকি ভালো না। কেন ভালো না সেটা কেউ বলে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর নেতাদের নিয়ে সারাদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ভাষণ দিচ্ছেন। মানুষকে মিলে মিশে থাকতে বলছেন। যেখানে বঙ্গবন্ধু যাচ্ছেন সেখানেই প্রচুর মানুষ বঙ্গবন্ধু আর তার সাথের নেতাদের ভাষণ শুনতে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব’কে নিয়ে অনেক জানার ইচ্ছা তপুর। তার ক্লাসের বন্ধুরা বঙ্গবন্ধুর নাম শুনলেও তাঁর সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না। শুধু জানে বড় নেতা। বড়দাকে বললে বড়দাও পরিস্কার করে কিছু বলে না। বাবা আজকাল পত্রিকা নিয়ে আসেন বাড়িতে। শ্রীমঙ্গল পত্রিকা আসে এক বা দুদিন পর। হাতে গোনা দুতিনটে ট্রেন ঢাকা সিলেট যাতায়াত করে সারাদিন। যোগাযোগ মানে ট্রেন। দোকানের মালামাল সবই ট্রেনে আসে। তপুদের বাড়ির পাশ ঘেষেই রেললাইন। সুরমা মেইল, চট্টগ্রাম মেইল, গ্রীন এ্যরোতে, ভৈরব লোকাল এসব ট্রেন ওদের বাড়ির পাশ ঘেষেই যাওয়া আসা করে। শ্রীমঙ্গল ষ্টেশনে প্রত্যেকটা ট্রেন এর যাত্রা বিরতী আছে। তপুরা মামার বাড়ি যায় ট্রেনে চড়েই। অধিকাংশ ট্রেনই কয়লা চালিত। ভয়ংকর কালো রঙের ইঞ্জিন টেনে নিয়ে যায়। মাত্র দ্ত্রুকটা ট্রেনের ইঞ্জিন খুব সুন্দর। রঙিন। সেগুলোতে কয়লাও লাগে না। তেলে চলে। বাবা বলেন সব কিছুর দাম বেড়ে যাচ্ছে দ্রুত। তেলের দাম বাড়াতে ট্রেনের ভাড়াও বাড়ছে। তাই মালামাল আনার খরচ বাড়ছে। পত্রিকাতেও লিখছে দেশের নানা খবর। রাজনীতির খবরই বেশী। নানা আন্দোলন হচ্ছে দেশ জুড়ে। হরতাল হচ্ছে। হরতালে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকছে। মালপত্র আসছে না। দাম বাড়ার এটাও একটা কারণ।
"পরিচিতিঃ মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার উত্তরসুর গ্রামে ১৯৬৫ সালের ১লা মে তারিখে জন্ম গ্রহন করেন। পিতা নীরোদ রঞ্জন পাল,মাতা শেফালী পাল শেলী। ১৯৮২ সাল থেকে লেখালেখি শুরু। কিছুদিন সাংবাদিকতা করেন।ব্যবস্থাপনায় øাতকোত্তর। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে সহকারী পরিচালক (অর্থ) হিসাবে কর্মরত আছেন।১৯৯২-৯৩ সালে লিটলম্যাগ ‘দ্রষ্টব্য’র সাথে জড়িয়ে পড়েন। সম্পাদনা করেছেন ছড়াপত্র প্রবাহ, ছড়াপত্র চান্দ্রেয়ী,একফর্মা ছড়াপত্র,কবিতাপত্র নৈ। বর্তমানে সম্পাদনা করছেন ছড়া বিষয়ক লিটলম্যাগ ‘ছড়াপত্র’।প্রকাশিত গ্রন্থ ‘ভূতের নাম তিড়িং বিড়িং’‘আকাশ নীলে হলুদ পাখি’‘ঘাসফড়িঙের নয়টি পা’‘গিট্টুমামার সাধু দর্শন’‘গিট্টুভূত ও তিড়িংবিড়িং’‘উপমার বাঘমামা’`ছোট্ট হাতের লম্বা কান্ড’‘কালো দানবের পাতাল যাত্রা’‘অবশেষে চৈত্র অন্তিমে’। সম্পাদিত গ্রন্থ ‘শ্রীহট্টের সূর্য সন্তান’।আশির দশকে ছড়া পরিষদ,সিলেট পুরস্কার লাভ করেন।