ইসলামী ব্যাংকব্যবস্থা মুসলিম বিশ্বে নতুন একটি সংযোজন। নতুন-ধারার এই আর্থিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানতে উৎসুক, আবার অনেকে প্রচন্ড সন্দিহান। তাই ইসলামী ব্যাংকব্যবস্থা কীভাবে কাজ করে, আধুনিক ব্যাংকব্যবস্থার সাথে এর মিল-অমিল, সীমাবদ্ধতা ও সমাধান নিয়ে সংক্ষিপ্ত পরিসরে বইটিতে আলোচনা করা হয়েছে। বইটির অন্যতম দুইটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যৌক্তিক বিশ্লেষণ এবং ভাষার সরলতা। সম্পূর্ণ বিশ্লেষণধর্মী লেখায় ইসলামী ব্যাংকব্যবস্থাকে গল্পের ছলে তুলে ধরা সহজ নয়। কিন্তু এই কঠিন কাজটিই করা হয়েছে এই বইতে। একেবারে নতুন একজন পাঠকও বইটি পড়ে ইসলামী ব্যাংকব্যবস্থার ফাঁকি পুরোপুরি অনুধাবন করতে পারবে। মুরাবাহা, মুদারাবা, শিরকাতুল মিল্ক সহ জটিল জটিল সব চুক্তি লেখকের প্রাণবন্ত বর্ণনায় ছবির মত রঙ্গিন ও সুস্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে। আলোর মত পরিষ্কার হয়ে গেছে শুভংকরের ফাঁকির অন্ধকার সব অলি-গলি। বইটির আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে সমস্যা চিহ্নিত করে ক্ষ্যান্ত না হওয়া। বাস্তবে আদর্শ ইসলামী ব্যাংকের রূপরেখা কেমন হতে পারে তা সুনিপুণ ভাবে এখানে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। পাশাপাশি ইসলামী ব্যাংক খাতে কর্মরত অসংখ্য ব্যক্তির সাক্ষাৎকারের আলোকে বাস্তব অভিজ্ঞতা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এক বাক্যে, মহিরুহের মত বেড়ে উঠা ইসলামী ব্যাংকব্যবস্থা আসলেই কতটা ইসলামী এবং এই সমস্যার সমাধান কী তা সুস্পষ্ট যুক্তির আলোকে সরল বাংলায় বর্ণনা করা হয়েছে এই পুস্তিকায়।
দীর্ঘ দশ বছর দেশে-বিদেশে অধ্যয়ন শেষে মােহাইমিন পাটোয়ারী বর্তমানে অর্থনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। ২০১৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে বিবিএ সম্পন্ন করে তিনি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক 'চার্টার্ড ফাইনান্সিয়াল এনালিস্ট প্রােগ্রামে যুক্ত হন। অর্থনীতি এবং ফাইনান্সের পাশাপাশি গণিতের প্রতি রয়েছে তাঁর ঝোঁক। সিএফএ অধ্যয়নরত অবস্থায় দ্বিতীয় স্নাতক প্রােগ্রামের জন্য তিনি গণিত বিভাগে নাম লেখান উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ২০১৬ সালে স্নাতকোত্তর গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের সেরা দশে অবস্থানের পুরস্কার অর্জন করেন। ২০১৭ সালের জুন মাসে তিনি সিএফএ পরীক্ষার তৃতীয় এবং শেষ ধাপ সম্পন্ন করেন। তাঁর জীবনের ক্ষুদ্র একটি অপূর্ণতা হচ্ছে গণিতে স্নাতক সম্পন্ন করতে না পারা। স্নাতক করা অবস্থাতেই নরওয়ে স্কুল অফ ইকনমিক্সে মাস্টার্স প্রােগ্রামের জন্য তার ডাক পড়ে। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি নিশীথ সূর্যোদয়ের দেশে পাড়ি জমান। অতঃপর নরওয়ে স্কুল অব ইকনমিক্স থেকে দ্বৈত মাস্টার্স প্রােগ্রামের জন্য তিনি যন্ত্রের দেশ জার্মানির স্বনামধন্য মানহাইম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান। পড়াশােনার পাশাপাশি খেলাধুলা, ভ্ৰমণ, শিক্ষকতা এবং ভাষা শিক্ষার জগতেও তিনি একজন সক্রিয় ব্যক্তিত্ব। ২০১৮ সালে চাইনিজ ব্রিজ কম্পিটিশনে জাতীয় পর্যায়ে তৃতীয় স্থানসহ খেলাধুলার জগতেও রয়েছে তাঁর একাধিক পুরস্কার। বর্তমানে অর্থনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বাংলা ভাষায় অর্থনীতির জগতকে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। বই লেখার পাশাপাশি সংবাদপত্রেও তিনি নিয়মিত কলাম লিখেন। সরল বাংলায় এবং গল্পের ভঙ্গিমায় তাঁর লেখাগুলাে ইতােমধ্যেই পাঠকদের মন কেড়ে নিয়েছে।