বাংলাদেশের রাজনৈতিক জগতের এক গৌরবদীপ্ত নায়কের নাম ফজলুল হক মণি। পাকিস্তানের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তার রাজনৈতিক উত্থান। মামা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি। নানা রাজনৈতিক উত্থান-পতনে বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য থেকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন, দিয়েছেন নানা পরামর্শ কিংবা বঙ্গবন্ধুর নীতি আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছেন রাজপথে। শেখ ফজলুল হক মণি’র যখন রাজনৈতিক উত্থান তখন পূর্ববাংলা (পূর্ব পাকিস্তান) রাজনৈতিক অঙ্গনে ছিল সেনা শাসক। রাজনৈতিক অঙ্গন ছিল নিপীড়ন ও অত্যাচারের চরম পর্যায়ে। শেখ ফজলুল হক মণি দমিয়ে থাকেননি সেই অত্যাচার ও নির্যাতনের ভয়ে বরং আরও শক্তিশালী রূপে তিনি রাজনীতিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, জেল-জুলুম ভোগ করেছেন। পাকিস্তানি স্বৈরাচারী সরকার তাকে নানাভাবে হয়রানি করেছেন। পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী ছাত্রলীগের অন্যতম নেতা হিসেবে রাজনীতিতে আবির্ভাব। ১৯৪৭ পরবর্তী থেকে ১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধে তিনি ছিলেন অগ্রগামী সৈনিক। মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে যেমন স্বৈরাচার বিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামে তিনি ছিলেন অগ্রগামী তেমনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তিনি ছিলেন প্রথম সারির সংগঠক ও যোদ্ধা। তৎকালীন শিক্ষিত যুব সমাজকে একত্রিত করে তিনি গড়ে তুলেছিলেন নিজস্ব একটি বাহিনী মুক্তিযুদ্ধে এই বাহিনীর অবদান ছিল ব্যাপক। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশ যে, নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত হয়, সেখান থেকে বের করে আনার জন্য তিনি ছিলেন সদা তৎপর। একটি উন্নত সুখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে তিনি সৃষ্টি করেছিলেন তাঁর নিজস্ব রাজনৈতিক দর্শন। সেই রাজনৈতিক দর্শন বাস্তবায়ন করার জন্য তিনি হয়েছিলেন পত্রিকার সম্পাদক। দেশের যুব সমাজকে কাজে লাগিয়ে উন্নত সুখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ গঠন করে তার নেতৃত্বের ভার দেন শেখ ফজলুল হক মণি’র উপর। শেখ ফজলুল হক মণি সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে যুব সমাজকে সংগঠিত করে গড়ে তোলেন আওয়ামী লীগের একটি শক্তিশালী অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তাঁর যে নিজস্ব চিন্তা দর্শন ছিল তা প্রয়োগ করার একটি সুন্দর প্লাটফর্ম গড়ে তোলেন তিনি। ‘বাংলার বাণী’র সম্পাদকীয় পৃষ্ঠায় লিখেছেন তার নিজস্ব রাজনৈতিক দর্শন সম্পর্কে চিন্তা ও মতবাদ। শেখ ফজলুল হক মণি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যুব সমাজের যেমন ছিলেন তিনি আইকন তেমনি স্বাধীনতা পরবর্তীতে বাংলাদেশের কৃষক শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের কাছে তিনি ছিলেন মুক্তির ত্রাণকর্তা। রাজনীতিতে তাঁর একদিনে আবির্ভাব ঘটেনি, ছাত্র রাজনীতি থেকে হাতে খড়ি, জেল জুলুম ভোগ করা এক ত্যাগী নেতা হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন বাংলার সাধারণ মানুষের কাছে। শুধু রাজনীতিবিদ হিসেবেই না তিনি ছিলেন একাধারে লেখক সম্পাদক কলামিস্ট। চিত্র পরিচালনা তাঁর আগ্রহ ছিল সমানভাবে। এই বহুমুখি প্রতিভাধর রাজনীতিবিদের জীবন দর্শন ও রাজনৈতিক ভাবনা নিয়ে আমার এ বইটি। সব গবেষণাই আপেক্ষিক ও অসম্পূর্ণ। আমার এই গবেষণা কর্মটির বাহিরে না, তারপরেও যর্থাথ চেষ্টা করেছি। শেখ ফজলুল হক মণি’র জীবন রাজনীতি ও রাজনৈতিক দর্শন সম্পর্কে পুরোটাই উঠে না আসলেও ভবিষ্যৎতে এই ক্ষণজন্মা রাজনীতিবিদ সম্পর্কে যারা কাজ করতে আগ্রহী হবে তাদের জন্য একটি সহায়কগ্রন্থ হবে।
Title
১৫ই আগস্টের প্রথম শহিদ যুব রাজনীতির প্রবক্তা শেখ ফজলুল হক মণি’র রাজনৈতিক জীবন ও দর্শন
মাসুদ রানা ৫ নভেম্বর ১৯৭৬ সালে কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী থানার কালিকাতলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা শেখ রওশন আলী ও মাতা জামেলা বেগম। তিনি বাঁশগ্রাম হাইস্কুল। থেকে মাধ্যমিক, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেন। একাধারে তিনি কবি, গবেষক ও প্রাবন্ধিক। এ পর্যন্ত তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ : • কালিগঙ্গার বাঁকে বাঁকে, আত্মা রক্তাক্ত হয়। প্রতিদিন (কাব্যগ্রন্থ)। • আমারে কবর দিও কালিগঙ্গার বাঁকে (কাব্যগ্রন্থ) • শালঘরমধুয়ার নীলকুঠি (কাব্যনাট্য) • বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছাত্রজীবন ও ছাত্র-রাজনীতি (গবেষণাগ্রন্থ)। • গুরু-শিষ্য ভাসানী বঙ্গবন্ধু (গবেষণাগ্রন্থ) • মুক্তিযুদ্ধ থানা কমান্ডারের অসমাপ্ত জবানবন্দি (গবেষণাগ্রন্থ) • বঙ্গবন্ধু যখন যুক্তফ্রন্টের কৃষি ও সমবায় মন্ত্রী (গবেষণাগ্রন্থ) • প্রাদেশিক সরকারে বঙ্গবন্ধু যখন দুর্নীতি দমন মন্ত্রী (গবেষণাগ্রন্থ) • আমাদের জাতীয় সংগীত : বঙ্গবন্ধুর রবীন্দ্রপ্রীতি (গবেষণাগ্রন্থ) • বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বাম বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা (গবেষণাগ্রন্থ) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও দার্শনিক ভিসি ড. মমতাজ উদ্দিন আহমদ-এর সময়কাল ১৯৫৭-১৯৬৫ (গবেষণাগ্রন্থ)। • মুক্তিযুদ্ধ, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও বর্তমান বাংলাদেশ (প্রবন্ধগ্রন্থ) • আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু (গবেষণাগ্রন্থ) তিনি বগুড়া পাঠচক্রের প্রধান সমন্বয়কারী ।