ইসলামের ইতিহাসের উৎসধারা হচ্ছেন নবীজির প্রিয় সাহাবিগণ। তাঁরা নবীজির প্রত্যক্ষ সাহচর্য লাভ করেছেন। নবীজির জীবন ও আদর্শ এ জগতে তাঁরাই সর্বপ্রথম সচক্ষে অবলোকন করেছেন। এ জন্য নবীজির বক্তব্য ও নির্দেশনা সংরক্ষিত হয়ে আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে। নবীজির হাদিস তাঁরাই প্রথম বর্ণনা করেছেন। তাঁদের এ বিরল অবদানের ফলশ্রুতিতে আমরা হাদিসশাস্ত্র সম্পর্কে অবগত হতে পেরেছি। তবে সাহাবিদের যুগে ব্যাপকভাবে হাদিসের সংকলন বিন্যস্ত না হলেও তাবেয়িদের যুগ থেকে এর ধারা শুরু হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে তৃতীয় শতাব্দী নাগাদ নবীজির হাদিস গ্রন্থাকারে স্থায়ীভাবে সংরক্ষিত হয়। ১১ হিজরিতে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। নবীজির পরে তাঁরই সাহাবিগণ তাঁর উত্তরসুরীর ভূমিকায় ইতিহাসে আবির্ভুত হন। তবে নবীজির হাদিস সংকলন ও প্রচার-প্রসারের ক্ষেত্রে নবীজির সকল সাহাবি একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন না। বরং তাঁদের কয়েকজন হাদিস সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ঐতিহাসিক বিভিন্ন সূত্রমতে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সান্নিধ্যপ্রাপ্ত সৌভাগ্যবান সাহাবিদের সংখ্যা এক লাখেরও কিছু বেশি। তাঁদের সকলে সাহাবি হলেও সবাই নবীজির সান্নিধ্যে সারাক্ষণ থাকার সময় পেতেন না। জীবিকা নির্বাহ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজে ব্যস্ততার কারণে তাঁরা নিজেদের সুবিধেমতো নবীজির দরবারে আগমন করতেন এবং কুরআন ও সুন্নাহ থেকে জ্ঞান অর্জন করতেন। অতএব হাদিসের মতো শরিয়তের দ্বিতীয় প্রধান উৎসের সংকলন ও সংরক্ষণে সকল সাহাবি একই পর্যায়ের নয়; বরং এক্ষেত্রে তাঁদের কয়েকজন অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবিদের সংখ্যা কত, এ নিয়ে হাদিসশাস্ত্রের মণীষী ও গবেষকদের মাঝে যথেষ্ট মতপার্থক্য পাওয়া যায়। তবে এ বিষয়ে সমস্ত পরসিংখ্যান সামনে রেখে বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে, হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবিদের সংখ্যা নিয়ে একাধিক মতামত থাকলেও সার্বিক হিসেবে তা দেড় হাজারের বেশি নয়। হাদিসশাস্ত্রের গবেষক ও পন্ডিতগণের বিশ্লেষণ ও অভিজ্ঞতার আলোকে হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবিদের তালিকা পাঁচটি স্তরে ক্রমবিন্যাস করা হয়েছে। উক্ত ক্রমবিন্যাস অনুসারে সব মিলিয়ে হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবি হলেন সর্বমোট ১১১১ জন। তাঁরা সকলে মিলে সর্বমোট ৩১,৬৯৬ টি হাদিস বর্ণনা করেছেন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক হাদিস বর্ণনাকারী নবীজির প্রথম দশ সাহাবির জীবন-তথ্য নিয়ে এ সিরিজটি প্রস্তুত করা হয়েছে। দীর্ঘ অধ্যয়ন ও গবেষণার পর ইতিহাস গবেষক ও লেখক আব্দুল্লাহ আল মাসুম সিরিজের প্রথম পাঁচজন হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবির জীবন ও অবদান গ্রন্থাকারে পাঠকমহলের হাতে তুলে দিলেন। পরবর্তী পাঁচজন হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবির জীবন-তথ্য নিয়ে অচিরেই তিনি আবারও হাজির হবেন আপনাদের দরবারে...
আব্দুল্লাহ আল মাসুম। জনপ্রিয় আলোচক ও ইসলামি স্কলার। বিষয়ভিত্তিক গবেষণা ও লেখালেখির জগতে ব্যতিক্রমী ও প্রত্যয়দীপ্ত তরুণ। তাত্তি¡ক বিষয়ে অনুসন্ধানী সময় কেটে যায় তাঁর। জন্ম ও বেড়ে ওঠা ২৩ মার্চ ১৯৮৭ সনে ঢাকায় জন্ম। এরপর ছোটবেলায় বাবার সরকারি চাকরির সুবাদে পরিবারসহ ইরানে কেটে যায় ছয় বছর। শিক্ষাজীবন এরপর বাংলাদেশে এসে চাঁদপুর জেলার মুমনিপুর হাফেজিয়া মাদরাসায় প্রাথমিক শিক্ষার সূচনা ঘটে। মাত্র দশ বছর বয়সে আট মাসে পূর্ণাঙ্গ হিফজ সমাপ্ত করেন। হিফজ শেষে প্রাথমিক আরবি ও মাধ্যমিক স্তর পেরিয়ে রাজধানী ঢাকার জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলুম ফরিদাবাদে উ”চ মাধ্যমিক স্তরে ভর্তি হন। ২০০৬ সনে বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে আলিম পাশ করেন। এরপর ২০০৮ সনে জামিয়া আরাবিয়া ফরিদাবাদ থেকে দাওরায়ে হাদিস (মুমতাজ) এবং ২০১০ সনে ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা থেকে আত-তাখাসসুস ফি উলুমিল হাদিসে (মুমতাজ) হয়ে উত্তীর্ণ হন। বর্তমানে তিনি ইউনানি চিকিৎসাবিজ্ঞানের প্রাচীন বিদ্যাপীঠ হাকিম হাবিবুর রহমান ইউনানি মেডিকেল কলেজে (সাবেক তিব্বিয়া হাবিবিয়া কলেজ) ৪র্থ বর্ষে ইউনানি চিকিৎসাশাস্ত্রে অধ্যয়নরত।। কর্মজীবন বর্তমানে গবেষণা-লেখালেখি কাজের পাশাপাশি দেশব্যাপী দ্বীনের দাওয়াতি মিশনে সক্রিয় রয়েছেন। ইসলামের ইতিহাস ও সিরাতভিত্তিক আহবানে মুসলিম তরূণদের সচেতনতা সৃষ্টি তাঁর লক্ষ্য। কখনো কলমের লেখনীতে, আবার কখনো বক্তৃতায়।। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কোনো বিষয়কে লেখনীর আবহে গুছিয়ে উপসাপন করার অদম্য বাসনা তাঁর লেখায় ফুটে উঠে। বায়তুল মুকাররমে ইসলামিক ফাউনডেশনের বই বিক্রয় কেন্দ্র থেকে নতুন বই কিনে আনার নিয়মিত অভ্যাস হয়েছিল বাল্যকাল থেকেই। পরবর্তীতে উ”চতর হাদিস বিভাগে অধ্যয়নের সময় একটি ওয়েব-সাইটে নিয়মিত প্রশ্নোত্তর লিখিতভাবে প্রকাশ করার ধারাবাহিকতায় পেশাগতভাবে লেখালেখিতে সক্রিয় হন।। জানুয়ারি ২০১৭ থেকে ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত তিনি মালয়েশিয়ার শিল্পনগরী নিগারা সেমবিলানের নিলাই-৭ জামে মসজিদের ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করেন। তা ছাড়া দাওয়াহ-গবেষণা, অনুবাদ-সংকলন, ফিকাহ ও সমকালীন প্রসঙ্গ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে গঠিত বহুমুখী সং¯’া তাহরিকুল কলম ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক তিনি।। প্রকাশিত গ্রন্থাবলি আবদুল্লাহ আল মাসুমের রচিত ও অনূদিত কয়েকটি বই ইতোমধ্যে প্রকাশ হয়েছে। এসবের মধ্যে ‘বিপ্লবি খলিফা উমর ইবনে আবদুল আজিজ’, ‘ইলমে হাদিসের বরেণ্য নক্ষত্র সুফিয়ান আস-সাওরি’, ‘হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি’, ‘হারুত-মারুত’, ‘সিরাতের প্রচলিত ভুল’, ‘রক্তে আঁকা কারবালা’, ‘মহাশূন্যের অভিযাত্রী’, ‘ইসলাম ও আধুনিক অর্থনৈতিক ব্যব¯’া’, ‘এসো তাজবিদ শিখি’, ‘খুলাফায়ে হাকীমুল উম্মত’, ভ্রান্তি নিরসন’, ‘খুতুবাতে জুল-ফিকার ৭-৮ খÐ’ এবং ‘হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবি সিরিজ (১-৫)’ উল্লেখযোগ্য। প্রচলিত ও গতানুগতিক ধারা সন্তর্পণে এড়িয়ে চলে প্রতিষ্ঠা করেছেন নিজের পরিচয়।।