বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ থেকে সিরাজউদ্দৌলা (১৭৩৩-১৭৫৭) বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব। তিনি ছিলেন এই মাটির অন্যতম শ্রেষ্ঠ মানুষ। বাংলার সিংহাসনের মর্যাদা ও স্বাধীনতা রক্ষা করাই ছিল তাঁর জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য। দেশী ও বিদেশী বিশ্বাসঘাতকদের চক্রান্তের ফলে সিরাজউদ্দৌলার পতন ঘটে এবং এই উপমহাদেশের ইংরেজ রাজত্বের সূত্রপাত হয়। নবাব আলীবর্দী খানের মৃত্যুর পর ১৭৫৬-এর ১০ এপ্রিল তিনি মুর্শিদাবাদের সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং ১৭৫৭-এর ২৩ জুন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাঁর পতন ঘটে। তিনি ছিলেন মহান দেশপ্রেমিক, সাহসীযোদ্ধা বিজ্ঞ রাজনীতিক এবং একজন আদর্শবান নবাব। আদর্শ চরিত্রের ছিলেন বলেই তাঁর তরুণী স্ত্রী তাঁর মৃত্যুর পর প্রায় অর্ধশতাব্দী স্বামীর কবরে কুরআন শরীফ পড়ে ও ইবাদত বন্দেগী করে কাটিয়ে দিয়েছিলেন। ইংরেজদের পালিত ও অনুসারী কিছু সংখ্যক ঐতিহাসিকদের লেখায় নবাব সিরাজের চরিত্রের উপর যতই দোষারোপ করা হোক না কেন, প্রকৃতপক্ষে এসব অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই। আজ একথা সত্য প্রমানিত হয়েছে যে, পলাশীর চক্রান্ত ও ইংরেজদের বাংলা বিজয়ের যথার্থতা প্রমাণ করার জন্যে সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে নবাব সিরাজের বিরুদ্ধে এসব কথা- বার্তা লেখা হয়েছে। ড. মুহাম্মদ ফজলুল হক রচিত 'নবাব সিরাজউদ্দৌলা ও বাংলার মসনদ' গ্রন্থটিতে এই সব বিষয় গুলো নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ফজলুল হক একজন শিক্ষাবিদ, সমাজসেবক, রাজনীতিক, শিল্পপতি, সাপ্তাহিক পলাশীর সম্পাদক ও উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট। তিনি টেক্সাস এ অ্যান্ড এম বিশ্ববিদ্যালয়। থেকে অর্থনীতি বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও ফিলিপিন্স ইউনিভার্সিটিতে দীর্ঘকাল শিক্ষকতা করেছেন। তিনি কুষ্টিয়ার দৌলতপুরস্থ ড. মুহাম্মদ ফজলুল হক গার্লস কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি এবং আমির গ্রুপ অব কোম্পানীর চেয়ারম্যান। নবাব সিরাজ ও পলাশীর যুদ্ধের সঠিক ইতিহাস উপস্থাপন করে তিনি জাতিকে উপহার দিয়েছেন ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা ও বাংলার মসনদ' নামে একটি গ্রন্থ। সেই সাথে বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে এসে লিখেছেন ‘ছড়ানাে পৃথিবী'। নবাব সিরাজের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে তিনি প্রকাশ করেছেন। ‘পলাশী' নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা। তিনি মনে করেন নবাব সিরাজ সম্পর্কে কিছু সংখ্যক ঐতিহাসিক অনেক অসত্য কাহিনী রচনা করেছেন। আসলে তিনি ছিলেন একজন মহান দেশপ্রেমিক, সাহসী যােদ্ধা, বিজ্ঞ রাজনীতিক ও ব্যক্তি চরিত্রে সহজ-সরল ও বিশিষ্ট নবাব । তিনি এ মাটির সাথে কোনাে দিন বেঈমানী করেননি।