ভূমিকা হস্তরেখা বিচার বা কররেখা বিচার কবে থেকে শুরু হয়েছে তা আজও কেউ সঠিক সিদ্ধান্তে উপনিত হ'তে পারেনি। তবে এর প্রাচীন নাম ‘সামুদ্রিক বিদ্যা'। এই নাম দেখে মনে হয় এই শাস্ত্রের প্রাচীনত্ব পণ্ডিতবৃন্দ কর্তৃক স্বীকৃত হইয়াছে। বৈদিক যুগের পূর্বে ভারতে প্রাক্ আর্যসভ্যতার কালে এ নিয়ে যে অল্প বিস্তর চর্চা হয়েছিল, তাতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। আবার ‘জ্যোতিষশাস্ত্র' বেদের একটি অংশ বিশেষ। কিন্তু আজ অনেকে প্রশ্ন তোলেন জ্যোতিষশাস্ত্রের সঙ্গে হস্তরেখার সম্পর্ক কোথায়? জ্যোতিষশাস্ত্রে পুত্র-কন্যা ভূমিষ্ট হবার পরমুহূর্ত থেকে তাদের লগ্ন, রাশি, গ্রহ, নক্ষত্র, দশা-পদ্ধতি বিচার করে ভূত ভবিষ্যৎ, বর্তমান বলে দেওয়া হত। তার মধ্যে একটা বিজ্ঞান আছে। যেমন বলা হয় আগে জ্যোতিষশাস্ত্র, তারপর জ্যোতিষবিজ্ঞান ।
এক্ষেত্রে আমার বক্তব্য হ'ল সামুদ্রিকবিদ্যা বা আধুনিক কালে 'হস্তরেখা বিচার’ নামে পরিচিত তাও হাতের আকৃতি, নখ, আঙুল, পর্ব, বৃদ্ধঙ্গুষ্ঠ, কলতলের রেখা, গ্রহের ক্ষেত্র দেখে নরনারীর ভূত ভবিষ্যৎ বর্তমান বলা হয়ে থাকে এবং এই বিদ্যা অতি মনোযোগের সহকারে অধ্যয়ন করিলে আর সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রকমের হাত ও হাতের রেখা ইত্যাদি দেখলে অতি সূক্ষ্ম জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব হয়। এ ক্ষেত্রে আমার মত হল হস্তরেখাবিজ্ঞান, জ্যোতিষশাস্ত্রেরই অন্তর্গত একটি শাস্ত্র বা বিজ্ঞানসম্মত একটি পুস্তক ।
তবে আজ এখানে একটা কথা হ'ল জ্যোতিষশাস্ত্র জাতক-জাতিকার জন্মের পর যে কোষ্ঠী প্রস্তুত করা হয়, এক্ষেত্রে তা হয় না। এখানে নর-নারীর চেহারা, তাঁদের দেহের আকৃতি, দৈর্ঘ্য, হাতের মানচিত্র, রেখা, হাত, বাহু, পদদ্বয়, বক্ষ, চক্ষু, কর্ণ-নাসিকা, গ্রীবা প্রভৃতি দেখে ভাগ্য বলা হয়। এখানে প্রতীকের সাহায্য নেওয়া হয়েছে। এই প্রতীকের সাহায্য নেওয়ার জন্য অনেকের মতে প্রাচীন যুগে এই বিদ্যার আবিস্কৃত ছিল। আবার কেউ কেউ বলেন, লিঙ্গপূজার যুগ থেকে এই বিদ্যাচর্চা করা হত। কিছু কিছু অভিজ্ঞ ব্যক্তির মত হল, বৌদ্ধযুগের সময়ে এই বিদ্যাটি একটা বিরাট আকার নেয় এবং তন্ত্রসাধনার কালে এই বিদ্যার খুবই প্রয়োজন ছিল, তা আমি পরে আলোচনা করবো ।