আমি একজন সামান্য কবি। হে প্রভুগণ, আপনারা গুণী মানী লোক, আপনারা কত পড়েছেন, কত শুনেছেন, আপনারা রসের বিচার করতে জানেন। আমি আপনাদের সভায় এসেছি, যদি অনুমতি পাই, আমি আপনাদের আজ দু'জন নারী-পুরুষের ভালোবাসার গান শোনাব। ভালোবাসার জন্যই মানুষ পৃথিবীতে জন্মায়, কিন্তু এই যে দু'জন-এদের মতো এমন তীব্র-মধুর ভাবে আর কেউ বোধহয় কখনও ভালোবাসেনি। আপনারা মহৎ, আপনারা উদার, আপনারা জানেন ভালোবাসা হচ্ছে আগুনের মতো, যাতে কোনও পাপ স্পর্শ করে না। আপনারা অন্তর দিয়ে বুঝতে পারবেন, এই দুই হতভাগ্য প্রেমিক-প্রেমিকা প্রেমের শক্তিতে কী করে পাপ-পুণ্য ছাড়িয়ে গিয়েছিল। আহা, ওদের গান শুনতে যে-মানুষ পাহাড়ের মতো কঠোর ব্রহ্মচারী তারও বুক ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে ঝরনা। অপ্রেমিকও প্রেমিক হয়। সুখভোগ আমোদ-আহ্লাদে ডুবে আছে যে-মানুষ, এই গান শুনে সেও এক মুহূর্ত থমকে যায়, তার মনে পড়ে-জীবনে কী যেন বাকি রয়ে গেল, বুকের মধ্যটা উদাস উদাস হয়ে যায়। এই গান শোনার পর, যখন আপনারা কেউ একা থাকবেন, আপনাদের মনে হবে-এই পৃথিবীতে যে জন্মালুম, জীবনটা ঠিক মতো বাঁচা হল তো? নাকি এক জীবন মনের ভুলেই কেটে গেল। ভালোবাসাহীন জীবনই তো ভুল জীবন! আমি এই গান গ্রামে গ্রামে, হাটেবাজারে, নদীর ধারে গেয়ে বেড়াই। আজ আপনাদের সভায় এসেছি। অনুমতি করুন।
Title
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সুনির্বাচিত উপন্যাস প্রথম খণ্ড
বিশ শতকের শেষাংশে জন্ম নেওয়া সব্যসাচী একজন বাঙ্গালি সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট- এমন বহু পরিচয়ে সাহিত্যের অগণিত ক্ষেত্রে তিনি রেখেছেন তাঁর সুকুমার ছাপ। নীললোহিত, সনাতন পাঠক কিংবা কখনো নীল উপাধ্যায় ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়েছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর বই সমূহ। অধুনা বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪। কিন্তু মাত্র চার বছর বয়সেই স্কুল শিক্ষক বাবার হাত ধরে সপরিবারে পাড়ি দিয়েছিলেন কলকাতায়। ১৯৫৩ সালে সাহিত্যে বিচরণ শুরু হয় কৃত্তিবাস নামের কাব্যপত্রিকার সম্পাদনার মধ্য দিয়ে। ১৯৫৮ সালে প্রকাশ পায় প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘একা এবং কয়েকজন’। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর বই মানেই পাঠকের কাছে আধুনিকতা আর রোমান্টিকতার মেলবন্ধন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কবিতার বই হলো ‘আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি’, ‘যুগলবন্দী’ (শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে), ‘হঠাৎ নীরার জন্য’, ‘রাত্রির রঁদেভূ’ ইত্যাদি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বই সমগ্র ‘পূর্ব-পশ্চিম’, ‘সেইসময়’ এবং ‘প্রথম আলো’ তাঁকে এপার, ওপার আর সারাবিশ্বের বাঙালির কাছে করেছে স্মরণীয়। ‘কাকাবাবু-সন্তু’ জুটির গোয়েন্দা সিরিজ শিশুসাহিত্যে তাকে এনে দিয়েছিলো অনন্য পাঠকপ্রিয়তা। তাঁরই উপন্যাস অবলম্বনে কিংবদন্তী পরিচালক সত্যজিৎ রায় পরিচালনা করেছিলেন ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ এবং ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’র মতো চলচ্চিত্র। পাঠক সমাদৃত ভ্রমণকাহিনী ‘ছবির দেশে কবিতার দেশে’ কিংবা আত্মজীবনীমূলক ‘অর্ধেক জীবন বই’তে সাহিত্যগুণে তুলে ধরেছিলেন নিজেরই জীবনের গল্প। ২০১২ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চার দশকে তিনি পরিচিত ছিলেন জীবনানন্দ পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি এবং বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে।