ফ্ল্যাপে লিখা কথা বাংলা শিশু ও কিশোর সাহিত্য শাহরিয়ার কবিরের আগমন এমন এক সময়ে যখন সাহিত্যের এই বিশেষ শাখটি ছির সবচেয়ে অবহেলিত। ষাটের দশকের শেষার্ধে রোকনুজ্জামান খান(দাদাভাই) সম্পাদিত মাসিক ‘কচি ও কাঁচা’ এবং এখলাসউদ্দিন আহমদ সম্পাদিত মাসিক ‘টাপুর টুপুর’ এ গল্প ও প্রবন্ধ লেখার মাধ্যমে শাহরিয়ার কবিরের আত্নপ্রকাশ ঘটেছে এবং সঙ্গে সঙ্গে তা পাঠক ও সমালোচকের দৃষ্টি আকর্ষন করেছে ভিন্নধর্মী আবেদনের কারণে। ছোটদের জন্য নিছক ছেলেমানুষি ভরা রূপকথা, হাস্যকর হাসির গল্প কিংবা পাকিস্তানি চেতনাকে সমৃদ্ধ করার জন্য তথাকথিত ইসলামী ভাবধারার কিসসা -কাহিনীর বিপরীতে সম্পূর্ণ ভিন্ন মেজাজের গল্প উপন্যাস লিখলেন তিনি এবং অল্প সময়ের ভেতর পাঠকের মন জয় করলেনূ। তাঁর প্রথম কিশোর উপন্যাস ‘পুর্বের সূর্য’ প্রকাশ করেছে কলকাতার বিশিষ্ট প্রকাশক এশিয়া পাবলিশিং কোম্পানি ১৯৭২ সালে।বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উপর এটি প্রথম কিশোর উপন্যাস যা লেখকের ‘৭১-এর রোজনামচার ভিত্তিতে রচিত।বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পুরোনো ধারার শিশু কিশোর সাহিত্য চর্চা যেমন বন্ধ হয়ে যায় , আর্থিক অনটনের কারণে ‘কচি ও কাঁচা’ ও ‘টাপুর টুপুর’ এর প্রকাশনাও অনিয়মিত হতে হতে বন্ধ হয়ে যায়। শিশু কিশোর সাহিত্য তখন ধুঁকতে ধুঁকতে কোন রকমে টিকে ছিল কয়েকটি দৈনিকের ছোটদের পাতায় আর বাংলা একাডেমীর ‘ধান শালিকের দেশে’র মাধ্যমে। ‘৭৪ ও‘৭৫ সাল ছিল শিশু কিশোর সাহিত্যের জন্য এমনই আকলের বছর যখনস সব মিলিয়ে ১০ টি বইও প্রকাশিত হয়নি। সেই আকালের সময় শাহরিয়ার কবির গল্প লেখার পাশাপাশি লিখলেন ‘নুলিয়াছড়ির সোনার পাহাড়’ ও ‘হারিয়ে যাওয়া ঠিকানা’ যা বাংলাদেশের শিশু ও কিশোর সাহিত্যে মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত। ছোটদের জন্য লেখালেখির পাশাপাশি তিন যুগেরও বেশি অতিক্রান্ত হওয়ার পর প্রকাশিত হচ্ছে শাহরিয়ার কবিরের ‘কিশোর গল্পসমগ্র’। এগুলো এতদিন ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল বিভিন্ন গ্রন্থে। এসব গল্প প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে লেখকের স্কুল জীবনের স্মৃতি। গল্পের সঙ্গে এক মলাটের ভেতর স্থান করে নিয়েছে স্কুল জীবনের কথা- সাধু গ্রেগরীর দিনগুলি’।
সূচিপত্র * লেখকের কথা * একাত্তরের যীশু * পিয়ানো ভূতের গল্প * গর গোমেজের বাবা * নতুন বছরের ছন্দ * দেয়াল * রাজুর পৃথিবী * জয় পরাজয় * লাল সূর্য * বেনুর সুখ দু:খ * শহরে সকল সুখ * শয়তান ও একটি চারাগাছ * মিছিলের একজন * মিকি অগলীর মা * বড়দিনে স্বপ * এ্যান্টনী বুড়োর মৃত্যু * থেমে নেই * সূর্য এসো * সাদা প্রজাপতি * নিশির ডাক * নিশাচরের বাড়ি * শিরোলের শয়তান * প্রকৃতির প্রতিশোধ * রাঙাদাদু আসলে কে * সিয়ামিজ বেড়ালের লোম * সব ভালো যার শেষ ভালো তার * র-নগরের আজব সার্কাস * সুঙ তিঙ পোর’ ভূত ধরা * সুই মিনচুয়ের সাহস * বড় রাস্তার ভূত * চেন লুয়ানের কাটারি * ভূতের মাংস * জমিদার শী’র অভিশপ্ত বাড়ি * শয়তানের পরাজয় * পণ্ডিত ও ব্যাঙ ভূত * দায়মা ও পেয়াদা ভূত * রাক্ষস যাদুকর * নকল ভূত * ভূতের জন্য ভালোবাসা * ভূজের জুতোর বাড়ি * সমুদ্রের ভূত * সরাইখানার ভূত * বেপরোয়া ভদ্রলোক ও ভূত * কবি চেন ও নীল ভূত * ভূত শিকারী ওয়াঙ * চেন ও খারাপ আত্না * ভূতদের ভয় * ভূতের লজ্জা * প্রকৃতির পাঠশালায় * সাধু গ্রেগরির দিনের শুরু * একা থেকে অনেকের ভিড়ে * স্কুলের নতুন বন্ধরা * দুষ্টুমির রকমফের * শিক্ষদের প্রিয় মুখ * আনন্দ আর উৎসবের সমারোহ * একজন লেখকের জন্ম * অবাধ্যতার বয়স
শাহরিয়ার কবির বাংলাদেশের একজন খ্যাতিনামা লেখক, সাংবাদিক, ডকুমেন্টরী চলচ্চিত্র নির্মাতা। ১৯৫০ খ্রীস্টাব্দের ২০ নভেম্বর তিনি ফেনীতে জন্মগ্রহণ করেন। লেখক হিসাবে তার প্রধান পরিচয় তিনি একজন শিশুসাহিত্যিক। তার নির্মিত প্রামাণ্যচিত্রের মধ্যে জিহাদের প্রতিকৃতি অন্যতম।১৯৯২ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিপক্ষ শক্তির বিরূদ্ধে কাজ করে চলেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা সম্পূর্ণ করে শাহরিয়ার কবির ১৯৭২ সালে সাপ্তাহিক বিচিত্রায় সাংবাদিক হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৯২ সাল পর্যন্ত নির্বাহী সম্পাদক পদে থাকেন। তিনি একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এর সাথে যুক্ত আছেন। শাহরিয়ার কবির বলেনঃ“ মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ধ্বংস করা যায় না। বাংলাদেশে অধিকাংশ সময় নেতৃত্ব দিয়েছে ৭১’র পরাজিত শক্তি। তারা মুক্তিযুদ্ধের সব কিছু ধ্বংস করতে চেয়েছে কিন্তু পারেনি। তিনি বলেন, দেশের মানুষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়। মহাজোট সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করেছে। আমরা বিশ্বাস করি ২০১৩ সালের মধ্যে শীর্ষ স্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা সম্ভব হবে।