নাগিব মাহফুজ ১৯১১ সালের ১১ই ডিসেম্বর কায়রোর গামালিয়া মহল্লায় আরবি সাহিত্যে প্রথম এবং একমাত্র নোবেল পুরস্কার বিজয়ের গৌরবের অধিকারী নাগিব মাহফুজের জন্ম। নাগিব মাহফুজের লেখালেখির সূত্রপাত ঘটেছিল তিনি যখন প্রাথমিক স্কুলের ছাত্র তখন থেকেই, যখন তিনি গোয়েন্দা কাহিনী, ঐতিহাসিক ও রহস্য উপন্যাসের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। সাহিত্যের প্রতি দারুন ঝোঁক মাহফুজ পড়াশুনার ক্ষেত্রে গণিত ও বিজ্ঞানের প্রতি মনোযোগী ছিলেন এবং উচ্চতর শিক্ষার জন্য ১৯৩০ সালে ভর্তি হন ফুয়াদ বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেটি বর্তমানে কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত। ১৯৩৪ থেকে ১৯৭১ সালে ষাট বছর বয়সে চাকুরি থেকে অবসর গ্রহণ পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন সরকারি বিভাগে কাজ করেছেন সিভিল সার্ভেন্ট হিসেবে। ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত মাহফুজ অবিবাহিত জীবন কাটান। বিয়ে করেন ৪৩ বছর বয়সে। তার প্রথম উপন্যাস ‘খুফু’জ উইজডম’ প্রকাশিত হয় ১৯৩৯ সালে। নাগিব মাহফুজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস ‘কিফাহ তিবাহ’ বা ‘থেবসের যুদ্ধ’ আরবিতে প্রকাশিত হয় ১৯৪৪ সালে এবং এর ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয় প্রায় ছয় দশক পর ২০০৩ সালে । ১৯৪০ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত নাগিব মাহফুজ প্রায় ২৫টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। নাগিব মাহফুজ তার সাহিত্যকর্মের জন্য দু’বার মিশরের রাষ্ট্রীয় পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৮৮ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান, যা আরবি সাহিত্যে প্রথম নোবেল পুরস্কার। ১৯৮৯ সালে কায়রোর আমেরিকান ইউনিভার্সিটি তাকে প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল এবং ১৯৯৫ সালে তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রিতে ভূষিত করে। ১৯৯২ সালে আমেরিকান একাডেমী এন্ড ইন্সটিটিউট অফ আর্টস এন্ড লেটারস তাকে অনারারী সদস্যপদ দেয় এবং ২০০২ সালে তিনি আমেরিকান একাডেমী অফ আর্টস এন্ড সায়েন্সে নির্বাচিত হন। ২০০৬ সালের ৩০শে আগষ্ট তিনি ইন্তেকাল করেন। নাগিব মাহফুজের বাস্তবভিত্তিক উপন্যাস ‘কায়রো ট্রিওলজি’, তাকে বিশ্ব খ্যাতি এনে দেয় বিশাল এ উপন্যাসটির একই কাহিনীকে তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। ‘বায়ান আল-কাসরায়েন’ (প্যালেস ওয়াক-১৯৫৬), ‘কসর আল শউক’ (প্যালেস অফ ডিজায়ার-১৯৫৭) ও ‘আল-সুক্কারিয়া (সুগার ষ্ট্রিট-১৯৫৭)।
(আরবি: نجيب محفوظ) (জন্ম: ডিসেম্বর ১১, ১৯১১ - মৃত্যু: আগস্ট ৩০, ২০০৬) নোবেল বিজয়ী মিশরীয় সাহিত্যিক। নাগিব মাহফুজ মধ্যবিত্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র সাত বছর বয়সে তিনি মিশরীয় বিপ্লবে ১৯১৯ অংশ গ্রহণ করেন। তার মাধ্যমিক পরীক্ষার পরে, তিনি দর্শন বিভাগে ১৯৩০ সালে ভর্তি হন মিশরীয় বিশ্ববিদ্যালয় (বর্তমানে কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়)। ১৯৩৪সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন জরেন। এর পর ১৯৩৬ সালে দর্শনের গবেষণা কাজে একটি বছর অতিবাহিত করেন। পরে তিনি গবেষনা পরিত্যাগ করেন এবং একটি পেশাদার লেখক হয়ে যান। মাহফুজ তারপর আল-রিসালায়ের জন্য একজন সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেন, এবং এল-হিলাল এবং আল-আহরাম ছোটোগল্প লিখতে অবদান রাখেন। নাগিব মাহফুজ ১৭ বছর বয়স থেকে লেখালেখি শুরু করেন। ১৯৩৯ সালে তার প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত হয়। জীবদ্দশায় ৩০টি উপন্যাস লিখেলও ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৭ সালের মধ্যে প্রকাশিত কায়েরা ট্রিলজি তাঁকে আরব সাহিত্যের এক অনন্য উচ্চতায় তুলে ধরেন। এতে তিনি ইংরেজ শাসন থেকেমুক্ত হওয়ার সময়কালে মিশরের ঐতিহ্যবাহী শহুরে জীবনধারা ফুটিয়ে তোলেন । এ উপন্যাসের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ১৯৮৮ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। নাগিব মাহফুজের উপন্যাসের প্রায় অর্ধেকেরও বেশীর চলচ্চিত্রায়ন হয়েছে। উপন্যাসের পাশাপাশি তিনি ১০০ টিরও বেশি ছোটগল্প রচনা করেছেন। এগুলির বেশীর ভাগই পরে ইংরেজিতে অনুদিত হয়েছে।