ইসলাম ধর্মে মতভেদের কারন : “ইসলাম ধর্মে মতভেদের কারণ” পুস্তকে তিনটি প্রবন্ধ আছে। প্রথমটি ‘নসখ ’ অর্থাৎ আল্লাহ ও তাঁহার রাসুল কর্তৃক কোরান ও হাদিসের কোন কোন কথা বাতিল এবং অদল-বদলকরণ। আল্লাহ ও তাঁহার রাসুল কোন কথা অদল-বদল অথবা বাতিল করিয়াছেন বলিয়া আমরা মোটেই বিশ্বাস করি না। দ্বিতীয় প্রবন্ধ হইল : রাসুলাল্লাহ আলাইহে সালাতু আস্সালামের ইহধাম ত্যাগ করার পর তাঁহার নিয়োজিত ‘অসি’ বা স্থলাভিষিক্ত প্রতিনিধি কিরূপ জীবন কাটাইয়াছিলেন তাহার একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র বা জীবনালেখ্য। তৃতীয় প্রবন্ধ হইল “আশরা-এ মোবাশ্শারা” কথাটির উপর এবং সবার শেষে রহিয়াছে আমাদের দলীয় ধর্ম বিশ্বাসের মূলনীতিসমূহের একটি তালিকা। ইহাতে বিপরীত এবং প্রচলিত মতবাদ সহকারে ২৩টি দফার উল্লেখ করা হইয়াছে। যদিও দ্বিতীয় প্রবন্ধটির নামকরণ করা হইয়াছে “রাসুলাল্লাহর পর মাওলা আলীর অবস্থা,” আসলে ইহাতে রহিয়াছে রাসুলাল্লাহর পরলোক গমনের পর বৈষয়িক ক্ষমতার কোন্দলের মধ্যে ইসলাম ধর্মের চরম দুর্গতি এবং অধঃপতনের একটু পরিচয়। রাসুলাল্লাহর পরে তাঁহার প্রচারিত ইসলামের উপরে শাসকগণের অত্যধিক অস্ত্রোপচার এবং রদবদলের ফলে ইসলাম ধর্ম ছিন্নভিন্ন হইয়া ক্রমে বহুরূপ ধারণ করিয়াছে, যাহার ফলে ইহার সত্য উদ্ধার করা বর্তমান কালে বিষম একটি কঠিন বিষয় হইয়া দাঁড়াইয়াছে। মুসলমানদের মধ্যে এই কারণেই অত্যধিক ধর্ম শিক্ষার ব্যবস্থা থাকা সত্তে¡ও শাস্ত্রজ্ঞ ধর্ম-বিজ্ঞানী পাওয়া যায় না বলিলেই চলে। ধর্মের নামে যেসব বিধান চলিতেছে তাহা আসলে আল্লাহর নামে “রাজকীয় ধর্ম”। মূর্তিপূজা পরিত্যক্ত হইয়াছিল বটে কিন্তু মানুষ স্বাধীন হইতে পারে নাই। মানুষ আল্লাহর দাস না হইয়া অবশেষে আরব সাম্রাজ্যবাদের দাসে পরিণত হইয়াছিল। আরব জাতি রাসুলের আনীত মুক্তির বাণী ব্যর্থ করিয়া দিল। রাজ্য জয়ের মধ্যে ইসলামের জয় ছিল না। যদিও মোহাম্মদী ইসলামের জন্ম মক্কায়, কিন্তু সেখান হইতে লাঞ্ছিত-বিতাড়িত হইল। মদিনায় আশ্রিত হইয়া অতিকষ্টে বড় হইল। উমাইয়া রাজশক্তির কবলে পড়িয়া দামেস্কে উহা পচিয়া গেল এবং আব্বাসীয় রাজশক্তির কবলে পড়িয়া বাগদাদে উহা মরিয়া গেল। শ্রদ্ধেয় ব্যক্তির নাম উল্লেখের সঙ্গে তাঁহাদের জন্য যথাযোগ্য সম্মানসূচক কথা নামের সঙ্গে পুনঃপুনঃ লেখা হয় নাই। আশা করি পাঠক-পাঠিকাগণ তাঁহাদের নামের সঙ্গে যথাস্থানে যাহা পাঠনীয় তাহা পড়িয়া লইবেন। যথা : “আলাইহে সালাতু আস্সালাম,” “আলাইহে সালাম,” “সালামাল্লাহে আলাইহে,” অথবা “সালামাল্লাহে আলাইহা,” “রাজি আল্লাহু আনহু,” “রহমতুল্লাহ আলাইহে,” ‘হজরত’ ইত্যাদি। এইরূপ না পড়া কার্পণ্য এবং ক্ষেত্রবিশেষে বেয়াদবীও বটে। নিবেদক সদর উদ্দিন আহমদ চিশতী