"ধুলোমাটির মানুষ ধুলোমাটির কবিতা" আন্যন্ত মাটির কবিতা। শিকড়বাকড় সমেত সোঁদামাটির সুবাসমাখা শিকড়ের কবিতা। পণ্ডিতরা নামকরণ করেছেন 'বাংলা আঞ্চলিক কবিতা', কিন্তু প্রান্তজনেদের এই কথকতাকে কি কোনো অঞ্চলের সংকীর্ণ গণ্ডি দিয়ে সীমায়িত করা যায়? না সে যায় না। তাই জীবনের সব সহায় সম্পদ হারিয়ে উচ্ছেদ হওয়া আদিবাসী মুলুকের সর্দার সিয়াটেল সরাসরি তর্জনি তোলে, ও প্রিসিডেন সাহাব/ তুমাদে ইসব ফন্দি ফিকির আমরা কিছু বুঝতে নাই পারছি/ আমাকে বুঝাও দেখি/ কী করে তুমরা করবে বেচাকেনা/ এই নীল আকাশ/ সবুজ মাটি/ বুনা হাওয়া/ লদীর জল/ দেখঅ আমরা ত ইসবের মালিক লই হে/ তাহালে তুমরা কেমন করে কিনবে ইসব?' ১৮৫৪ সালে মার্কিন রাষ্ট্রপতি ফ্র্যাঙ্কলিন পিয়ার্সের উদ্দেশে সিয়াটেলের এই জিজ্ঞাসা আজ আবার নতুন করে প্রতিধ্বনিত হয়ে চলেছে প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ আদিবাসীদের জল জমি আর জঙ্গলে। তৃতীয় বিশ্বে যখন একশো চল্লিশ কোটি চাষির বীজের ভাঁড়ার ধ্বংস হওয়ার হাহাকার ওঠে— তখন ধুলোমাটির কবিতায় ভূমিজ আত্ম -জনের জন্য আন্তরিক উচ্চারণে ধ্বনিত হয় 'জিয়ন্ত ফসিলে'র প্রতিবাদ। ‘উখানে তেঁতুলতলাতে লীলকর সাহেবকে জলজ্যান্ত পুঁতে দিয়ে/ ই তল্লাটে লীল চাষ রুখেছিলম আমরা/ আর আজই স্বাধীন মুলুকে মাটির হক তরা লিজেরা রাখতে লারছিস? শুধু কি প্রতিবাদ, প্রেমও আছে, সে প্রেমে কোনো জটিল আবর্ত নেই, সে এক ভিন্ন ধারার প্রেম। সেখানে মেলাতলায় প্রথম দেখায় বাঁশি না বাজালেও আপনি উঠে বেজে, তখন মন বলে ওঠে, 'তোর নাকছাবিটা চিড়িতন/ চিড়িতন/ তাতে ভালোবাসার লাগছে কালি / সে লাগুক তবে জনমের মতন। এভাবেই এই বাংলায় স্রোতের উজানে ভেসে ভেসে/ কলমিলতার মতো আজো আছে বেঁচে/ খেটে খাওয়া মানুষের কথকতা ধুলোমাটির কবিতা ।