ভূমিকা হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহঃ) তাঁর লিখিত কিভাবে “এসলাহে ইনকিলাবে উম্মত” শিরোনামে আমল ও এবাদতে সাধারণ মুসলমানের (ক্ষেত্রবিশেষ বিশিষ্ট ব্যক্তিদেরও) ত্রুটি-বিচ্যুতি ও অবহেলা উদাসীনতাগুলোকে চিহ্নিত করে তা থেকে উত্তরণের পথ প্রদর্শন করেছেন।
থানভী সাহেব কর্তৃক লিখিত সেই মূল্যবান বিষয়টি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। তারই একটি অংশ “আপনি নামাজে দুরুস্ত কি জিয়ে” (আপনার নামাজ শুদ্ধ করুন) আমার পড়ার সৌভাগ্য হয়। বিষয়টি আমার খুবই পছন্দ হয়। আর এই পছন্দই আমাকে উৎসাহিত করে- এবাদতের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির যাবতীয় তত্ত্ব ও ভুল-ত্রুটি গতি-প্রকৃতি সহজ ও সাবলীলভাবে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে। আমার এই চিন্তার কথা যখন আমার কিছু ঘনিষ্ঠ বন্ধুর কাছে ব্যক্ত করলাম, তখন তাঁর আমাকে পরামর্শও দিলেন যে, (যেহেতু বিষয়টি নামাজ সংশ্লিষ্ট এবং থানভী সাহেবেরই লেখা, তাই) এর সাথে যেন বেহেশতী জেওরের নামাজ সংক্রান্ত মাসআলাগুলো যুক্ত করে দেয়া হয়, তাহলে এটি একটি পরিপূর্ণ কিতাব হয়ে যাবে এবং সাধারণ মুসলমানগণও এ থেকে বিশেষভাবে উপকৃত হবেন।
আল্লাহর নামে কিতাবটির কাজ আমি শুরু করেছিলাম, আর যেহেতু তাহারাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপর বরং তাহারাত ছাড়া নামাজই শুদ্ধ হবে না; তাই নামাজের মাসআলার পূর্বে তাহরাতের অধ্যায়টিও যুক্ত করে দিলাম। আল্লাহ আমাদের এই মেহনতকে কবুল করুন এবং সকলকেই উত্তম বিনিময় দান করুন।
এশফাক আহমদ কাসেমী ১৩৯৮ হিঃ
সূচীপত্র * নামাজের ভুল-ত্রুটি * পবিত্র বর্ণনা * নামাজের বর্ণনা
হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী, ভারতীয় উপমহাদেশ এবং এর গন্ডি পেরিয়ে যিনি হাজারো মানুষকে দিয়েছেন আত্মশুদ্ধি ও তাসাওউফ এর শিক্ষা। যার কারণে তাঁর উপাধি ছিলো ‘হাকীমুল উম্মাত’ বা উম্মাহর আত্মিক চিকিৎসক। উপমহাদেশে মুসলমানদের মাঝে সুন্নতের জ্ঞান প্রচারে তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংস্থা ‘দাওয়াতুল হক’ এর অবদানের জন্যও প্রসিদ্ধ মাওলানা আশরাফ আলী থানভীর নাম। মাওলানা আশরাফ আলী থানভী ১৯ আগস্ট, ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে (রবিউস সানী ৫, ১২৮০ হিজরী) ভারতের উত্তর প্রদেশের থানাভবনে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবেই হাফেয হোসাইন আলী রাহ.-এর কাছে সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্থ করার মধ্য দিয়ে শুরু হয় তাঁর শিক্ষাজীবন। নিজগ্রামেই ছোটবেলায় হযরত মাওলানা ফতেহ মুহাম্মদ থানভী রাহ.-এর কাছ থেকে আরবি ও ফার্সি ভাষার প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। ১২৯৫ হিজরীতে তিনি দারূল উলুম দেওবন্দে ভর্তি হন ইসলামি জ্ঞান-বিজ্ঞানের উচ্চতর শাখাগুলোয় বিচরণ করার আগ্রহে। সেখানে তিনি পাঁচ বছর হাদীস, তাফসীর, আরবি সাহিত্য, ইসলামী দর্শন, যুক্তিবিজ্ঞান, ইসলামি আইন এবং ইতিহাস বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। দেওবন্দে শিক্ষার অধ্যায় সমাপ্ত করে মক্কা মুকাররমায় মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ্ মুহাজিরে মক্কীর কাছে কেরাত ও তাজবীদ শেখেন। তিনি কানপুরের একটি মাদ্রাসায় মাত্র ২৫ টাকা বেতনে শিক্ষকের পদ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে কানপুরের টপকাপুরে জামিউল উলূম মাদ্রাসার প্রধান পরিচালকের আসন অলংকৃত করেন এবং দীর্ঘ ১৪ বছর সেখানে শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীতে তাঁর শিক্ষক হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কীর রহ. পরামর্শে তিনি থানা ভবনের খানকাহে ইমদাদিয়ায় অবস্থান গ্রহণ করেন এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। সারা জীবনে আশরাফ আলী থানভী এর সকল বই এর হিসেব করতে গেলে ছোট-বড় মিলিয়ে তা সাড়ে বারো হাজার ছাড়িয়ে যায়। হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. এর বই সমূহ এর মধ্যে ফিকাহ বিষয়ক বই ‘বেহেশতী জেওর’ উপমহাদেশের মুসলমানদের মাঝে বহুল পঠিত। এছাড়া তাঁর রচিত কুরআন শরীফের উর্দু তরজমার গ্রন্থ বয়ানুল কুরআনও (কুরআনের ব্যাখ্যা) এর ভাষা ও ব্যখ্যাশৈলীর জন্য প্রসিদ্ধ। হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. এর বই সমগ্র এর স্বত্ত্ব তিনি জাতির কল্যাণে উন্মুক্ত করে রেখে গেছেন। জুলাই ১৯, ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে (১৬ রজব, ১৩৬২ হিজরী) আল্লামা থানভী রহ. তাঁর জন্মস্থান থানা ভবনেই মৃত্যুবরণ করেন।