বাংলা ভাষায় রচিত রোমন্টিক পদ্যে বিরহ একটি বিশেষ স্থান দখল করে রেখেছে। নারী-পুরুষ নিয়ে এই বিশ্বচরাচর অনাদিকাল হতে চলছে। তাই, নরনারীর সম্পর্ক বিবর্জিত সাহিত্য কল্পনা করা প্রায় অসম্ভব বলা চলে। কেননা, সাহিত্য মানব জীবনেরই প্রতিচ্ছবি।. কবি নির্মলেন্দু গুণ তাঁর ' উপেক্ষা ' কবিতায় বিরহের কথা কত নান্দনিকভাবে উপস্থাপন করেছেন। অনন্ত বিরহ চাই, ভালোবেসে কার্পণ্য শিখিনি৷ তোমার উপেক্ষা পেলে অনায়াসে ভুলে যেতে পারি সমস্ত বোধের উত্স গ্রাস করা প্রেম; যদি চাও ভুলে যাবো, তুমি শুধু কাছে এসে উপেক্ষা দেখাও৷ আমি কি ডরাই সখি, ভালোবাসা ভিখারি বিরহে? "বিষাদ বোঝাই ডিঙি" কাব্যগ্রন্থে কবি বিরহে দুমড়ে মুচড়ে যেতে চান না।ফিরে আসার প্রত্যয় দেখা যায় কবিতায়। ' একদিন আমিও' কবিতায় কবি লিখেছেন- চোখ রাঙানোর ভয়ে আমি আর চুপ করে রইবো না, কারও অত্যাচার মুখ বুজে আমি আর সইবো না, মনের আশা-ভাষাকে আর গলা টিপে মারবো না। দেখে নিও, একদিন আমিও... 'ফের জন্মে চখাচখি হবো ' কবিতায় কবির এক অনন্য অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন- ধান ক্ষেত থেকে পাট ক্ষেতের টলমলে জলে ডানকিনি মাছের টুপ করে ডুব পা ভিজিয়ে ঠোঁট চুবিয়ে পাশাপাশি চুপ চুপ আমাদের সৌন্দর্যে হিংসায় জ্বলতো ময়ূর! আমরা তা দেখেও দেখতাম না আমরা ব্যস্ত থাকতাম… নিজেদের সাজিয়ে তোলার কাজে এ জন্মে তো সেটা হলো না রে…. ফের জন্মে যেন চখাচখি জীবন হয় মোদের। কবিতাগুলো পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে দিবে ও পাঠকপ্রিয়তা পাবে।
কবি তাহমিনা নিশা খুলনা জেলার খালিশপুরে ২২ নভেম্বর ১৯৭৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈত্রিক বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার বাজুমারা গ্রামে। ছােটবেলা থেকেই কবি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড , সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। স্কুল জীবনে পড়ার সময়েই কবির লেখালেখির সূত্রপাত হয়। মাঝে স্বল্প বিরতি পড়লেও বর্তমানে বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা, ম্যাগাজিন, ছােট কাগজে লিখে চলেছেন নিয়মিত। লেখালেখির পাশাপাশি আবৃত্তিকার ও সংগঠক হিসেবেও কৰি পৰিচিত। তিনি রেডিও বাংলাদেশ খুলনার লিষ্টেড শিল্পী। এছাড়াও বাংলাদেশ টেলিভিশনে ও বাংলাদেশ বেতার খুলনায় গান, নাটক, কথিকা পাঠে অংশ নিয়েছেন। ১৯৯৪ সালে মিস্ বাঙ্গালী প্রতিযােগিতায় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত বিবি রাসেল ও ডক্টর ইউনুসের সাথে “পজেটিভ বাংলাদেশ” নিয়ে সারা। বিশ্বে কাজ করেছেন। সেই সময় বাংলাদেশের তাঁত শিল্প ও “গ্রামীণ চেক” কাপড়কে বিশ্ব বাজারের কাছে তুলে ধরার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্য সংগঠন অনুশীলনের সদস্য ছিলেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনােবিজ্ঞান বিভাগে মেধা তালিকায় প্রথম হয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। বর্তমানে তিনি একজন সাইকোলােজিষ্ট হিসেবে কর্মরত আছেন। তাহমিনা নিশার “ওরা দু’জনে” ও “ভালবাসার আঁচড় নামের দুটি উপন্যাস প্রকাশিত হয় ২০০৮ সালের বই মেলায়। দীর্ঘ বিরতির পর ২০২২ এর বই মেলায় প্রকাশিত ”পাখির মতাে তার ৪র্থ গ্রন্থ। এটি প্রথম কবিতার বই হলেও কবিতার প্রচলিত ধারণার ভেতরেই রয়েছে তার স্বতন্ত্র ও নিজস্ব চিন্তাভাবনা ও কর্মকৌশল। প্রাচীন বাংলার আবহমানশেকড়ে দাঁড়িয়ে সারা জগতের শিল্পস্বার আস্বাদনের প্রত্যয় তার ভাবনার মাঝে। নতুন শতকে আমাদের কালের যারা পরিশ্রমী শব্দসৈনিক, সেই অনেকের মাঝে খানিকের কাছে বা দূরে- তাহমিনা নিশা একজন।