লেখা নিয়ে লেখা যায় আরো কতশত এটা ঠিক ভূমিকা নয়, ভূমিকার মত সনতোষ বড়ুয়ার সাহিত্য চর্চার সূচনা ছড়া লিখে, গত শতকের সত্তরের দশকের শেষদিকে। এরপর আশি ও নব্বইয়ের দশক জুড়ে ওর বিরতিহীন পথচলা। সনতোষের ছড়া বিষয় বৈচিত্র্যে ভরা। কখনো প্রকৃতি, কখনো স্বদেশ কখনো শিশু মনের আবেগ আবার কখনো সমকালীন প্রসঙ্গ। বরং বিপন্ন রাজনীতির দুঃসহ কালে সনতোষের কলম হয়েছে ক্ষুরধার। মুক্তিযুদ্ধের ভুলুণ্ঠিত চেতনা আর ধর্মান্ধ রাজনীতির যখন উলঙ্গ আস্ফালন, তখন সনতোষের ছড়া হয়েছে ঝকঝকে তলোয়ার। তবে ছড়াতেই আবদ্ধ থাকেনি সনতোষ, পাশাপাশি কবিতা আর গল্পেও হয়েছে নিমগ্ন। ওর গ্রন্থ তালিকা তারই সাক্ষ্য দেয়। বিজ্ঞানের কৃতী ছাত্র হয়েও বাংলা সাহিত্যে পড়ালেখা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে পুলিশের কর্মকর্তা পদে চাকরি, অতঃপর চাকরি ছেড়ে মার্কিন মুলুকে বসবাস। জীবনের বিচিত্র দিককে দেখার অবকাশ হয়েছে সনতোষের এবং তার ছায়াও পড়েছে রচিত সাহিত্যে। মেঘের খাপে আকাশ রাখে- সনতোষ বড়ুয়ার তৃতীয় ছড়াগ্রন্থ। দীর্ঘবিরতির পর সনতোষ ছড়া রচনায় আবারো মনোযোগী হয়েছে, যার প্রামাণ্য দলিল এই গ্রন্থ। আগেই উল্লেখ করেছি, ওর ছড়ার বিষয় একমুখী নয়। এই গ্রন্থেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। প্রকৃতি, গ্রাম, গ্রামের মেলা, বাবা-মা-দাদু-বন্ধু, রবীন্দ্রনাথ, নতুন বছর, ফুটবল, স্বদেশ- এরকম নানা বিষয় ছড়িয়ে রয়েছে ছড়ার ছন্দে। ছড়ায় অন্ত্যমিলের প্রয়োগে আর চিত্রকল্প নির্মাণে সনতোষ যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। অবশ্য একথাও বলে রাখি, এই গ্রন্থের বেশ কিছু ছড়াই কবিতামুখী, যাকে বলা যায় চমৎকার কিশোর কবিতা। সনতোষ বিষয়টি জানে। তাই ওর 'গোলমাল' শিরোনামের লেখাতেই সেটা স্পষ্ট “তুমি যেটা বলছ ছড়া ওটা আসলে পদ্য শব্দচয়ন আর উপমায় তোমার প্রকাশ সত্যি অনবদ্য।' ছড়া কিংবা পদ্য যে নামেই তাকে ডাকি না কেন, এটা নিশ্চিত যে, এই গ্রন্থের লেখাগুলো ছোট-বড় সকলের ভালো লাগবে। তাই গ্রন্থটি সর্বজন সমাদৃত হলে। আনন্দ ছুঁয়ে যাবে, আর আমরা অপেক্ষায় থাকব সনতোষের আরো ছড়ার জন্য। সনজীব বড়ুয়া চট্টগ্রাম
সন্তোষ বড়ুয়া কবি, ছড়াকার ও গল্পকার। জন্ম ১৯৬৩ সালে চট্টগ্রাম। বাড়ি ফটিকছড়ি থানার হাইদচকিয়া গ্রামে । লেখাপড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে। অতপর দীর্ঘদিন বাংলাদেশ পুলিশে চাকরি শেষে বর্তমানে আমেরিকা অভিভাসী। ছড়ার বই সামনে দাঁড়া পথরুখে (১৯৮৫) বিড়াল ডাকে মিউ মিউ (২০০৯) ছড়ায় গড়ায় ইতিহাস (২০১০) কিশোর গল্প উর্বা ও তিন পিঁপড়ে (২০০৬) হারবাং বিল ব্যাঙের ঝিল (২০১০) ছোট গল্প শালবৃক্ষের করাতিরা (২০০৬) কাঠবিড়ালি ক্রস ফায়ার (২০০৯) স্মৃতি কাহিনী আমিও পুলিশ ছিলাম (২০১৭) প্রথম কবিতার বই সুরের পোর্ট্রেট ও শ্যামলী মেয়ে অচিরা পাঠচক্র থেকে প্রকাশিত হয় ১৯৯১ সালে। তারপর কবিতায় দীর্ঘ বিরতি।