আকিমুন রহমানের এই যে গ্রন্থ- যার নাম নিরুদ্দেশের লুপ্তগন্ধা নদী- এতে সঙ্কলিত হয়েছে দুটি উপন্যাস : অচিন আলোকুমার ও নগণ্য মানবী এবং একদিন একটি বুনোপ্রেম ফুটেছিলো। এই উপাখ্যান-যুগলের উপজীব্য হচ্ছে- প্রেম! আমাদের এই অতি সামান্য মনুষ্য-জীবন, সেই জীবনই কখনো হঠাৎ পেয়ে যায়- পরম এক ধন। মহার্ঘ ধন। তার নাম প্রেম! তখন তুচ্ছতায় মোড়ানো প্রতিটা দিন, আচমকাই হয়ে ওঠে অত্যুচ্চ আনন্দময়। হয়ে ওঠে অবোধ্য এক চাঞ্চল্য ঝকমক। তখন আলোর মতো এক অন্ধকার- ঘিরে নেয় আমাদের। অচেনা তপ্ত অন্ধকার! মনোহর বিভাময়ী সেই আঁধার! তখন ভালো লাগতে থাকে সকল সামান্যতা, সবখানি তুচ্ছতা! ভালো লাগতে থাকে নিজেকে, নিজের সকল ব্যর্থতাকে! নিন্দার কাঁটাগুলো ভালো লাগতে থাকে, সকল বিরুদ্ধতাকে ভালো লাগতে থাকে! প্রিয় কাম্যজনের অদর্শনের মুহূর্তগুলো ভালো লাগতে থাকে! মুদ্রার দীনতাকে ভালো লাগতে থাকে। অপেক্ষাকে ভালো লাগতে থাকে! অশ্রুকে মোহকর লাগতে থাকে। বিরহকেও! ভালো লাগতে থাকে সকল ছুট! আমাদের পুরোটা অস্তিত্ব- আমাদের অন্তর বাহির-অই তখনই শুধু পায় অমরতার স্বাদ! শুধু ওই প্রণয়-লগ্ন থাকার কালটুকুতেই এই জীবন-সত্যকার বেঁচে থাকাকে চিনে ওঠে। অথচ এমনই নির্বন্ধ! ওই প্রণয়কে চিরকাল ধরে দুই বাহুতে জড়িয়ে রাখার ভাগ্য আসে না কখনো আমাদের! সে যেমন হঠাৎ এসে আমাদের চরাচর উত্থাল-পাথাল করে নেয়; তেমন আচমকাই সে আমাদের ফেলে রেখে চলে যায় কোন নিরুদ্দেশের দিকে। পেছনে পড়ে থাকে আমাদের অভাগা আত্মা ও শরীর! পড়ে থাকে পোড়ো-পতিত এক দেহ ও মনোভূমি। সেইখানে আর কী আগামীকালের জন্য স্বপ্ন ও আকুলতা মাথা উঁচোয়? আর কি কখনো জাগে- নব কোনো সাধ বা বাঞ্ছা? অচিন আলোকুমার ও নগণ্য মানবী এবং একদিন একটি বুনোপ্রেম ফুটেছিলো উপন্যাস দুটিতে আকিমুন রহমান ওই দ্যুতি ও আনন্দের, বিষাদ ও বিগ্রস্ততা ও বিফলতার গল্প বলেছেন! এবং যেই সমাজ ও রাজনীতিক বাস্তবতায়- ওই প্রেম ফুটে উঠে, ব্যর্থ হতে বাধ্য হয়েছে- সেই পারিপার্শ্বের গল্পও বলেছেন তিনি। মনিরুল মনির
ইনডিপেন্ডেট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ-এ অধ্যাপনারত আকিমুন রহমান পিএইচ ডি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তার প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ; আধুনিক বাংলা উপন্যাসে বাস্তবতার স্বরূপ, সােনার খড়কুটো, পাশে শুধু ছায়া ছিলাে, পুরুষের পৃথিবীতে এক মেয়ে, রক্তপুঁজে গেঁথে যাওয়া এ মাছি, এইসব নিভৃত কুহক।