সমস্ত প্রশংসা একমাত্র মহাপরাক্রান্ত, সর্বশক্তিমান, মহাজ্ঞানবান আল্লাহ তা‘আলার জন্য। যিনি অদ্বিতীয়, নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের স্রষ্টা, পালনকর্তা ও নিয়ন্ত্রক। এই বিশাল ও বিপুলায়তন সৃষ্টির মধ্যে ক্ষুদ্রাকৃতির মানবই শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি এবং আল্লাহর সর্বাধিক প্রিয় পাত্র ও প্রতিনিধি। উলেখ্য, নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের সকল বৃহৎ ও ক্ষুদ্র সৃষ্টি মহান স্রষ্টা আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়ে বিভিন্নভাবে আনুগত্য প্রকাশ করে। মানুষও এদের অন্তর্ভুক্ত। তবে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ হওয়ায় তার আনুগত্য প্রকাশের প্রক্রিয়াও নিঃসন্দেহে শ্রেষ্ঠ। মানুষ তার লব্ধ জ্ঞানের মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রকাশে তার অপূর্ব সৃষ্টি আসমান-যমীন, সূর্য-চন্দ্র, তারকারাজি, সাগর-মহাসাগর, পাহাড়-পর্বত, বন-জঙ্গল, মরুভূমি এবং আরও বহু বৈচিত্র্যময় সৃষ্টির প্রতি বিশেষ লক্ষ্য করতে পারে। মহাজ্ঞানী আলাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে তাঁর সৃষ্টি ভাণ্ডারের সৃষ্টি রহস্য, তাদের কর্মকাণ্ড, অবস্থানকাল ও শেষ পরিণতি বর্ণনা করেছেন। এগুলো শুধু মানুষের জ্ঞান লাভ ও আমলের জন্য অবতীর্ণ। তাই সারা বিশ্বের বহু জ্ঞান-পিপাসু, ধার্মিক, পণ্ডিত, মনীষী, বিজ্ঞানী, সাধক, গবেষক এই মহাসম্মানিত গ্রন্থ আল-কুরআন থেকে জ্ঞান আহরণে নিয়োজিত রয়েছেন। পবিত্র কুরআন অধ্যয়ন আমাদের সকলের জন্যই একান্ত কর্তব্য। বর্তমানে বাংলায় কুরআনের অনুবাদ প্রকাশ হওয়ায় কুরআন বুঝতে সুবিধা হয়েছে। বঙ্গানুবাদে কুরআন অধ্যয়নকালে একদিন কুরআনের সৃষ্টি বিষয়ক আয়াতগুলো মনোযোগ সহকারে অবলোকন করতে লাগলাম। অতঃপর এগুলোকে মোটামুটিভাবে গুছিয়ে চারভাগে বিভক্ত করলাম- (১) সৃষ্টির রহস্য। (২) সৃষ্টির কর্তব্য। (৩) সৃষ্টির স্থিতিকাল। (৪) সৃষ্টির পরিণতি। এরপর ভাবলাম, উলেখিত চারটি অধ্যায় বা পর্বকে দ্বীন ইসলামের খেদমতে উপহার দিতে পারলে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সান্নিধ্য লাভের পথে কিছু পুঁজি সঞ্চয় হ’তে পারে। এরূপ নিয়তেই ‘সৃষ্টির সন্ধানে’ শীর্ষক একটি ছোট পুস্তিকা রচনায় মনোনিবেশ করলাম। রচনার প্রথম অধ্যায়ে মানুষসহ যাবতীয় সৃষ্টির সৃষ্টি প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি, তাদের আকৃতি-প্রকৃতি, বাসস্থান, চলাচল ও রিযিক ব্যবস্থায় মহিমাময় আল্লাহ তা‘আলার সার্বভৌমত্বের বিশদ বিবরণ উপস্থাপন করা হয়েছে। দ্বিতীয় অধ্যায়ে সকল সৃষ্টি, বিশেষ করে বৃহৎ জড় বস্তুগুলোর আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ আনুগত্যের চিত্র দেখানো হয়েছে এবং সেগুলোর উপর বিশ্বাস স্থাপন পূর্বক মানব জাতিকে তাদের কর্তব্যে সঠিক পথ অবলম্বনের আহ্বান জানানো হয়েছে। তৃতীয় অধ্যায়ে সৃষ্টির আয়ুস্কাল বা পৃথিবীতে অবস্থানের দীর্ঘতা বা হ্রস্বতার সময় সূচিত হয়েছে। এখানে শ্রেষ্ঠ মানুষের অনিশ্চিত মূল্যবান সময়ের প্রাধান্যই পরিলক্ষিত হয়েছে। অতঃপর চতুর্থ ও শেষ অধ্যায়ে বিন্যস্ত হয়েছে সকল বৃহৎ বৃহৎ বস্তুর ধ্বংসযজ্ঞের ভয়াবহ ইতিহাস। এতদসঙ্গে মানবের পথহারা, দিশাহারা, মর্মান্তিক কাহিনী। এসব কিছু প্রাপ্তির ভাণ্ডার কিংবা উৎসস্থল বিশ্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব আল-কুরআন। বস্তুতঃ আল-কুরআনের প্রতি সকল মুসলিম ভ্রাতৃমণ্ডলীর দৃষ্টি আকর্ষণ করাই এই সামান্যতম লেখনীর অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। বলা আবশ্যক যে, সৃষ্টির সন্ধানে বিষয়বস্তুর অসীম কলেবরের তুলনায় এই অধম লেখকের শিক্ষাগত যোগ্যতা খুবই সামান্য। একমাত্র করুণাময় আল্লাহ প্রদত্ত মানসিক শক্তির উপরে ভিত্তি করে এই দুরূহ অভিযানে অংশ নিয়েছি। আলাহ তা‘আলার সাহায্য, দয়া-অনুগ্রহ, মেহেরবানী ও ভালবাসাই আমার সম্বল। আশা করি মহান আল্লাহ তা‘আলা, তাঁর প্রতি আমার অকৃত্রিম ভালবাসার বিনিময়ে আমার এই প্রচেষ্টা কবুল করবেন এবং মুসলিম সমাজে গ্রহণযোগ্যতা দান করবেন। সৃষ্টির সন্ধানে বইটি অনেক বিপথগামী মানুষকে সঠিক পথে ফিরে আসতে সহায়তা করবে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে পরকালীন মুক্তির যে কোন মহৎ উদ্যোগ বাস্তবায়নে তাওফীক্ব দান করুন।- আমীন।