দৈনিক আজাদী পত্রিকায় লিখছি ১৯৮৬ সাল থেকে। সমাজ ও সংস্কৃতি পাতায়। পাতাটি সম্পাদনা করতেন শ্রদ্ধাভাজন প্রদীপ দেওয়ানজী। তাঁরই অনুপ্রেরণায় আমার কলাম লেখা শুরু ১৯৮৮ সাল থেকে আগামীদের আসরে। সাপ্তাহিক সে কলামটির নাম ছিল চলচ্চিত্রের কথা। ছোটদের জন্যে লেখা। ১৯৯২ সাল পর্যন্ত লিখেছিলাম। এরপর চিরায়ত চলচ্চিত্র ও শতবর্ষে শ্রদ্ধাঞ্জলি নামে আরো দুটি কলাম লিখি সমাজ ও সংস্কৃতি পাতায়। ১৯৯৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদী শুরু করে তাদের সাপ্তাহিক প্রকাশনা আজমিশালী। যথেষ্ট পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করে এই সাপ্তাহিক প্রকাশনা। এই সাপ্তাহিকীতে প্রথম সংখ্যা অর্থাৎ ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯৭ থেকে ২৬ মে ২০১৫ পর্যন্ত প্রায় ১৮ বছর ধরে লিখেছি সাপ্তাহিক কলাম স্ক্রীন। স্ক্রীন নামটি প্রদীপদার দেওয়া। আজমিশালী প্রথমে প্রতি সোমবার ও পরে প্রতি মঙ্গলবারে প্রকাশিত হতো। ৯ জুন ২০১৫ থেকে শুরু হয়েছে আজাদীর সাপ্তাহিক প্রকাশনা খোলা হাওয়া। এ পাতায় প্রথম সংখ্যা থেকে লিখছি নতুন কলাম সিনেলগ । আজমিশালী প্রকাশিত হয়েছে ৮০০ সংখ্যা। স্ক্রীন কলামটি লেখা হয়েছে ৭০০ সংখ্যার মতো। মাঝে মধ্যে অনেক সংখ্যায় লেখা হয়নি। তবে দুঃখজনক হলো, সব লেখা সংরক্ষণ করা হয়নি ঠিকমতো। প্রচুর লেখা হারিয়ে গেছে। উইপোকাও কেটেছে অনেকগুলো। কেবল একটাই আশ্বাস দিই মনকে, সব লেখা আজাদীর আর্কাইভে রয়েছে। যে লেখাগুলি সংরক্ষণ করতে পেরেছি, সেখান থেকে নির্বাচিত কিছু নিয়ে এ গ্রন্থ। কিছু লেখা মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র : প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বাকী লেখাগুলো প্রকাশিতব্য অন্যান্য গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত করার ইচ্ছে রাখি। স্ক্রীন আমার নিজেরও অনেক প্রিয় কলাম ছিল। পাঠকপ্রিয়তাও পেয়েছিল কলামটি। আমিও আমার মনের অনেক কথা স্ক্রীনে বলার সুযোগ পেয়েছি। এজন্যে প্রদীপ দেওয়ানজী, আজমিশালীর সম্পাদক সানজিদা মালেক, সহ-সম্পাদক আসমা বীথি এবং সর্বোপরি দৈনিক আজাদী কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আমার অপরিসীম ক্ষণ ও কৃতজ্ঞতা। আরেকজনের কথা বিশেষভাবে স্মরণ করি। তিনি শ্রদ্ধাভাজন সিদ্দিক আহমেদ। প্রয়াত এই প্রিয় মানুষটি বিভিন্ন সময় নানা পরামর্শ যুগিয়ে আমাকে ঋণী করে রেখে গেছেন। স্ক্রীন কলামে মূলত লিখেছি চলচ্চিত্র নিয়ে। মাঝে মধ্যে সংগীত, সমসাময়িক নানান সামাজিক ঘটনা ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক বিষয় নিয়েও লিখেছি। এই গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত প্রায় সব লেখাই চলচ্চিত্র বিষয়ক। অন্যান্য বিষয়ের কয়েকটি লেখাও সংকলিত হয়েছে। সংগীত বিষয়ক লেখাগুলি নিয়ে পৃথক একটি সংকলন করার ইচ্ছে আছে। 'স্ক্ৰীন' বানানটি 'স্ক্রিন' না লেখার কারণ, কলামটি এই নামেই ১৮ বছর ধরে লিখে গিয়েছিলাম। এই গ্রন্থটি আমার জীবনের দুই দশক দীর্ঘ এক সময়ের স্মৃতিকে ধরে রাখবে। অনুজপ্রতিম বন্ধু মনিরুল মনিরের কাছে বরাবরের মতো অশেষ কৃতজ্ঞতা। এই বইটি প্রকাশের নেপথ্যে তারও ছিল আগ্রহ ও পরিশ্রম। বরং বেশিই। দীর্ঘ এক বছর ধরে লেখাগুলির মুদ্রণ সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করে গেছে স্নেহভাজন ইয়াছিন আরাফাত ইমন। তার জন্যে তাকে আন্তরিক শুভাশিস। অশেষ শ্রদ্ধা আমার মাতৃসমা খালাম্মা বেগম মুশতারী শফীর জন্যে। লেখাগুলি যখন প্রকাশিত হতো, প্রিয় খালাম্মা লেখাগুলি পড়ে প্রায় সময় আলোচনা করতেন। কাজেই এই গ্রন্থের ভূমিকা লেখার অধিকার তাঁরই রয়েছে। সবশেষে কৃতজ্ঞতা জানাই শ্রদ্ধাভাজন পাঠকদের। তাঁরা সঙ্গে রয়েছেন বলেই লিখতে আনন্দ ও সাহস দুটোই পাই। . শৈবাল চৌধুরী