সমাজ মনস্ক কবি তাপস চক্রবর্তী। দীর্ঘ দিন থেকে কবিতার সঙ্গে বসবাস। কবিতাকে জীবনের সঙ্গে প্রিয়তমার মতো সঙ্গী করে নিয়েছেন। কবিতার সঙ্গে তার প্রণয় আমৃত্যু চলবে। মননের সঙ্গে গাম্ভীর্যবোধের সমন্বয়ে তার কবিতার ধারা। রাজনীতির পাঠ তার কবিতার সজ্ঞানে ও সচেতনভাবে প্রভাব ফেলেছে। এ বিষয়টি অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। বিষয়টি সামনে রেখে তার কবিতার গীতি-প্রকৃতি ও শিল্পবোধ নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করতে হবে যে কোন আলোচকের। দৈশিক ও বৈশ্বিক চেতনায় সমকালীন রাজনীতির নানা ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া তার কবিতার পঙক্তিতে সক্রিয়ভাবে নিজস্ব বিভায় উদ্ভাসিত। প্রতিকূল পরিবেশের বিরুদ্ধে সর্বদা সজাগ কণ্ঠ এবং তার মানস গঠিত হয়েছে বাস্তবাদের ভাবধারায়। এ ভাবধারায় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে রুচিহীন রাজনীতি পরিহার করে মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তিতে শামিল হওয়া। কবি তাপস চক্রবর্তী কবিতার মাধ্যমে সে চেষ্টাই করে যাচ্ছেন। আজকের এই জন্মান্ধ সমাজে এ ধরনের যাত্রা কঠিন। সত্য কথাটি বলা যায় না। অন্ধকার সমাজে মুখোশ পরিহিত ক্ষমতাবান কতিপয় সদস্য সত্য বলাকে পাগলের প্রলাপ মনে করে। বক্তব্যকে প্রধান করে কবিতা রচনায় সিদ্ধহস্ত কবি। গদ্যভঙ্গিতে কবিতা রচনায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ এবং কবিতা শরীরে সাহসী প্রত্যয় নিয়ে গদ্যশব্দ ব্যবহার করেন। ইতোমধ্যে তার বেশ ক'টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। মৃত্যুর স্বরবর্ণ কাব্যগ্রন্থটি মহামারী করোনার ভেতর দিয়ে চলছে কবির দিন যাপন। দেখছেন সমাজের তথাকথিত সুশীলের অনৈতিক কর্মযজ্ঞ। এ অনিশ্চয়তার কালো যে কোন মূহূর্তে দুর্নীতিগ্রস্ত সমাজ থেকে অকারণে যে কেউ হারিয়ে যেতে পারে। এসব বিষয়-আশ্রয় দ্রোহ ও অভিমানের সমন্বয়ে এ গ্রন্থে স্থান পেয়েছে গদ্যকাব্যভঙ্গির সুষমায়। তাপস চক্রবর্তী একজন নাট্যকর্মী। নাটকেও সমাজ সচেতনতায় ছায়া স্পষ্ট। দ্রোহী মানসিকতার ভাটিপুত্র কবিতায় ও মঞ্চে সর্বদা ইতিবাচক ভূমিকায় দাঁড়িয়ে যান এবং রুচিশীল সমাজ নির্মাণে তার আগ্রহের কমতি নেই। রাজনীতি ও সমাজ মনস্ক কবির অন্তরের গহিন প্রদেশে জমে থাকা শোভনময় প্রকাশের আকুতি সার্বক্ষণিক বিরাজমান। এ কারণে বেছে নিয়েছেন কবিতা ও নাটক। যেহেতু এ পথ মসৃণ নয়। এ কর্মে কতটা সফল হবেন সেটি পাঠকের কাছে ছেড়ে দিতে হয়। . শাহিদ হাসান কবি, প্রাবন্ধিক, গল্পকার ও সাংবাদিক।