ছড়া কবিতার প্রসূতি। যখন বাংলা গদ্যের সৃষ্টি হয়নি তখনও ছড়া ছিল, পদ্য ছিল, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতো। বাংলা গদ্য তো যথার্থ অর্থে গড়ে ওঠে উনিশ শতকে মুদ্রণযন্ত্রের আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে। ছড়া মানুষের মুখের ভাষারই ছন্দময় রূপ। তাই দেখা যায় রবীন্দ্রনাথ থেকে শামসুর রাহমান পর্যন্ত অধিকাংশ কীর্তিমান কবি ছড়া লিখেছেন কবিতার ক্ষেত্রে অগ্রগামী হয়েও। কবিতা ব্যক্তিমনের সৃষ্টি। ছড়া মানুষের সমাজচিত্র থেকেই আসে। কখনও শিশুদের মন ভোলানোর জন্য আবোল-তাবোল কথার ছন্দে, কখনওবা মানুষের সুখ দুঃখের বিররণী হয়ে। মানুষের যুগ যুগ ধরে অর্জিত প্রবাদ-প্রবচনেও ছড়ার প্রয়োগ দেখা যায়। ছড়াকে এককালে গ্রামীণ মানুষেরা অভিহিত করতেন 'শোলক' নামে। এ-সময়ের খ্যাতিমান কবি অরুণ সেনও তাই কবিতা লেখার পাশাপাশি কখনও কখনও ছড়া না লিখে পারেন না। এটা তাঁর অন্তরের তাগিদে। দেশিয়ানাকে গ্রাহ্য করে ছড়া বাঁধতে কবি অরুণ সেনের অনায়াসপটুত্ব পাঠকের অজানা নয়। উপলধোওয়া অবিরাম স্রোতের মতো ছন্দের সলিল বহতা তাঁর ছড়া-কবিতায়। এছাড়াও অরুণের শিশু-কবিতায় নিপুণ শব্দক্রীড়া আর কল্পনার ক্রীড়াশীলতা যেমন আছে তেমনি আছে সরস বাচাল। যা তাঁর বালারস পরিবেশনকে করে তুলেছে উপভোগ্য। অরুণ সেনের ছড়ার বই প্রকাশিত হয়েছিল ২০০৫ সালে ছড়ায় ছড়ায় কথার নাচন শিরোনামে। এর দুটো সংস্করণও হয়। এবারে প্রকাশ হলো ছড়া ও শিশুতোষ কবিতার সংকলন ছড়া-কবিতার বিয়ে বাড়ি নামে। তাঁর এই ছড়া-কবিতাগুলো নিঃসন্দেহে জটিলতাহীন, ফুর্তিবাজ আর মনোহারী। . জন্ম ৩০ জুলাই ১৯৫৮। মৃত্যু ২৬ মার্চ ২০১৬। তার প্রকাশিত কবিতার বই : ‘শঙ্কায় নিনাদে শঙ্খ’, ‘বাইরে রেখে পা’, ‘শেষ বিকেলের কড়ানাড়া’, ‘রুদ্র গেছে রোদের বাড়ি’, ‘বুকে তার মুকুন্দরামের হাট’, কে মানুষ পলাতক বুকে কাঁদে’, ‘ভাল আছো সোনালু ফুল’, ‘অনেক ভুলের প্রতিবেশী’। ছড়াগ্রন্থ : ‘ছড়ায় ছড়ায় কথার নাচন’। সম্পাদিত ছোট পত্রিকা : ‘ঋতপত্র’