নারী ও পুরুষ نحمده ونصلى على رسوله الكريم اما بعد আল্লাহ্ তাআলা মানব জাতিকে দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত করেছেন। ১. পুরুষ ও ২. মহিলা। মানুষ হিসাবে এ দু'য়ের মাঝে কোন তারতম্য না হলেও এদের শারীরিক গঠন, চলাফেরা, উঠা-বসা, সক্ষমতা, আকর্ষণ-বিকর্ষণ, নিরাপত্তা এবং বিধি-বিধান, নিয়ম-কানুন ও জীবন-যাপন পদ্ধতিতে বেশ কিছু বিষয়ে বড় রকমের পার্থক্য রয়েছে। অনুরূপভাবে ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুন ও ইবাদত-বন্দেগীর মাঝেও বেশ তারতম্য রয়েছে যা কোরআন-হাদীস দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত। ইবাদতের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো নামায়। এই নামায পড়ার তরিকায় নারী ও পুরুষের মাঝে অনেক ব্যবধান রয়েছে। যা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীছের মধ্যে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। এমনিভাবে সাহাবীদের মধ্যে অন্যতম সাহাবী, নবীজীর আপন জামাতা হযরত আলী (রা) এবং রঈসূল মুফাস্সিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) সহ অন্যান্য সাহাবীগণ বলেছেন নামাযে নারী ও পুরুষের মাঝে ব্যবধান রয়েছে। সাহাবীদের পর তাবেয়ীনদের যুগ। তাবেয়ীদের মধ্যে অন্যতম তাবেয়ী হযরত আতা ইবনে আবী রাবাহ (রহ) যিনি মক্কাবাসীদের ইমাম ছিলেন। হযরত মুজাহিদ ইবনে জাবের (রহ) তিনিও মক্কাবাসীদের ইমাম ছিলেন। হযরত ইবনে শিহাব যুহরী (রহ) যিনি মদীনাবাসীদের ইমাম ছিলেন। সেই মক্কা ও মদীনার ইমামগণসহ অন্যান্য তাবেয়ীগণও বলেছেন- “নারী ও পুরুষের নামাযের মধ্যে পার্থক্য আছে।” এমনিভাবে তাবে-তাবেয়ীনগণসহ সারা বিশ্বের সমস্ত হক্বানী ওলামায়ে কেরামগণ যুগ যুগ ধরে বলে আসতেছেন যে, নারী ও পুরুষের মাঝে নামায ও অন্যান্য আমলের মধ্যে পার্থক্য আছে। এর সাথে সাথে নবীর যুগ, সাহাবীদের যুগ ও তাবেয়ীনদের যুগসহ হাজার বছর ধরে মক্কা মদীনাসহ সারা বিশ্বের মুসলমান নারী-পুরুষগণ ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতেই নামায ও অন্যান্য আমল আদায় করে আসতেছেন। এখনও প্রায় সারা বিশ্বে এভাবেই আমল চালু রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে একদল নামধারী মুসলমান ও কতিপয় ফেতনাবাজ নামধারী আলেম সর্ব-সাধারণ মুসলমানদের ঈমান ও আমল বিনষ্ট করার জন্য এবং মুসলিম উম্মার মাঝে ফাটল সৃষ্টি করার লক্ষ্যে আদা জলখেয়ে মাঠে নেমেছে। এরা সমাজে আহলে হাদীস, লা-মাযহাবী, গায়রে মুক্বাল্লিদ ইত্যাদি নামে পরিচিত। এরা সহীহ হাদীসের নামে, ইসলামের নামে কিতাবাদী লেখে এবং রেডিও টেলিভিশন ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে ওয়াজ-নসীহত ও বক্তব্য প্রচার-প্রশার করে সর্ব-সাধারণ লোকদেরকে পথভ্রষ্ট ও বিভ্রান্ত করতেছে এবং বলতেছে যে, 'নারী ও পুরুষের নামাযে কোনো পার্থক্য নেই।' অতএব সাবধান! আমরা যেন এই ধরনের ফেতনাবাজ আলেম ও মুসলমানদের লিখিত কিতাবাদি পড়ে, তাদের ওয়াজ ও বক্তব্য এবং খোড়াযুক্তি শুনে নিজের ঈমান-আমল ও নামাযকে বরবাদ না করি। বরং তাদের লিখিত বই পড়া থেকে এবং ওয়াজ-নসিহত শুনা থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখতে হবে এবং অভিজ্ঞ, পরিচিত, হক্কানী আলেমদের সাথে পরামর্শ করে বই পড়তে হবে এবং তাদের কাছে জিজ্ঞেস করে আমল করতে হবে। কেননা বর্তমান যামানায় অভিজ্ঞ আলেমদের সাথে পরামর্শ করে চলা ছাড়া ফেতনাবাজদের ফেত্না থেকে, ধোঁকাবাজদের ধোঁকা থেকে এবং প্রতারকদের প্রতারণা থেকে নিজেদের আমল-আখলাক বাঁচানো সম্ভব নয়। অতএব আমরা যেন অভিজ্ঞ, হক্কানী আলেমদের সাথে সম্পর্ক রেখে পরামর্শ করে নিজেদের ঈমান ও আমল ঠিক রাখি এবং পথভ্রষ্টতা থেকে বেঁচে থাকি। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সঠিক পথে থাকার তাওফীক দান করুন। সম্মানিত পাঠক/পাঠিকা! কুরআন-হাদীসের আলোকে নারী ও পুরুষের মাঝে আমলগত পদ্ধতিতে যেভাবে ব্যবধান রয়েছে আমাদের প্রত্যেককে সেভাবেই আমল করতে হবে। চাই তা কোন দেশ বা জাতির সাথে মিল হোক বা না হোক। কারণ আল্লাহ তাআলা কোন দেশের সাথে মিল রেখে আমল করতে বলেন নাই। বরং আলেমদের কাছ থেকে জেনে কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করতে বলেছেন। সুতরাং আমাদের আমল কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী মিল হলেই যথেষ্ট হবে। চাই তা কোনো দেশের সাথে মিল হোক বা না হোক। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সঠিকভাবে আমল করার তাওফীক দান করুণ। আমীন।