লেখকে ভূমিকা প্রিয় ভাতিজা ! গল্প - কাহিনীর প্রতি তোমাকে আগ্রহী গভীর আগ্রহ দেখছি। তোমার বয়সী প্রতিটি শিশু এমনই হয়। ঘটনাগুলো খুব আগ্রহ নিয়ে শুনে থাকো এবং পড়ো। কিন্তু আমার আফসুস যে, আমি তোমার কচি হাতে জীব-জন্তুর গল্প কাহিনী ছাড়া আর কিছু দেখিনা। এর জন্য আমরাই দায়ী। কেননা এ সকল কাহিনীই তুমি ছাপার হরফে পেয়ে থাকো। ইতো মধ্যে তুমি আরবি ভাষা শিখতে শুরু করেছ। কারণ তা কুরআনের ভাষা, রাসূলের ভাষা, ধর্মের ভাষা। আর আরবি ভাষা অধ্যয়নে তোমার মাঝে আমি গভীর আগ্রহ লক্ষ করছি। কিন্তু এ কথা চিন্তা করে আমি লজ্জা বোধ করি। যে, তুমি জীব-জন্তুর কল্প-কাহিনী ব্যতীত তোমার বয়স উপযোগী কোনো আরবি কাহিনী পাও না। তাই আমি তোমার জন্য এবং তোমার সমবয়সী মুসলিম শিশুদের জন্য সহজ ও শিশু তোষ শৈলীতে নবী রাসূলদের ঘটনা সংকলনের নিয়ত করেছি। আর এই গ্রন্থটি হলো শিশুদের জন্য চয়নকৃত নবী কাহিনী সিরিজের প্রথম গ্রন্থ । তোমার হাতে আমি এই উপহার তুলে দিচ্ছি। এই ঘটনা সংকলনে আমি শিশু শৈলী ও তাদের স্বভাবের অনুসরণ করেছি। তাই আমি শব্দ ও বাক্যের পুনরোক্তি, শব্দের সরলতা এবং ঘটনার বিস্তৃতির প্রতি আশ্রয় নিয়েছি। আশা করি এ ছোট গ্রন্থটি প্রথম কিতাব হবে, যা আরবি ভাষায় ছাত্ররা পড়বে। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এটি দরস দেওয়া হবে। ইনশাআল্লাহ শীঘ্রই আমি তোমাকে আরো কিছু আগ্রহ উদ্দীপক, উপভোগ্য, সহজ, সুস্পষ্ট ও সুন্দর ঘটনাবলি উপহার দিবো। আর তাতে মিথ্যার কোনো কিছুই থাকবে না । হে মুহাম্মাদ! আল্লাহ যেন তোমার দ্বারা তোমার পিতা-মাতা, পিতৃব্য ও ইসলামের চক্ষুকে শীতল করেন এবং তোমার মাধ্যমে এই পরিবারে এবং মুসলমানদের মাঝে তোমার পূর্বপুরুষদের বরকত ফিরিয়ে দিন। আমীন! আবুল হাসান আলী নদভী
আল্লাহর পথের এক মহান দাঈ,ইলমে ওহীর বাতিঘর যুগশ্রেষ্ঠ মনীষী। খাঁটি আরব রক্তের গর্বিত বাহক।বিশ্বময় হেদায়েতের রোশনি বিকিরণকারী।উম্মতের রাহবর ও মুরুব্বি। কল্যাণের পথে আহ্বানে চিরজাগ্রত কর্মবীর। জন্ম ১৯১৪ ঈসাব্দে। ভারতের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতার সূতিকাগার উত্তর প্রদেশের রাজধানী লাখনৌর রায়বেরেলীতে। প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া আদ্যোপান্তই দারুলউলুম নদওয়াতুল উলামায়। অধ্যাপনা জীবনের সিংহভাগও এই প্রতিষ্ঠানে নিবেদিত ছিলেন। আল্লামা নদভীর খ্যাতির সূচনা হয় বিংশ শতাব্দীর ত্রিশের দশকে "সীরাতে সাইয়েদ আহমদ শহীদ" রচনার মাধ্যমে।গ্রন্থটি গোটা ভারতবর্ষে তাকে পরিচিত করে তুলে।এরপর তিনি রচনা করেন 'মা যা খাসিরাল আলামু বিনহিতাতিল মুসলিমিন' (মুসলমানদের পতনে বিশ্ব কী হারাল) নামক কালজয়ী গ্রন্থ।যা তাকে প্রথমত আরববিশ্বে ও পরবর্রতীতে বৈশ্বিক সুখ্যাতি এনে দেয়। এ পর্যন্ত গ্রন্থটির শতশত সংস্করণ বের হয়েছে। বিগত প্রায় পৌনে এক শতাব্দী ধরে তার কলম অবিশ্রান্তভাবে লিখেছে মুসলিম ইতিহাসের গৌরদীপ্ত অধ্যায়গুলোর ইতিবৃত্ত। সীরাত থেকে ইতিহাস, ইতিহাস থেকে দর্শন ও সাহিত্য পর্যন্ত সর্বত্রই তার অবাধ বিচরণ। উর্দু থেকে তার আরবী রচনায় যেন অধিকতর অনবদ্য। আল্লামা নদভী জীবনে যেমন পরিশ্রম করেছেন, তেমনি তার শ্বীকৃতিও পেয়েছেন। মুসলিম বিশ্বের নোবেল হিসেবে খ্যাত বাদশাহ ফয়সাল আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেন।১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে দুবাইয়ে তিনি বর্ষসেরা আন্তর্জাতিক ইসলামী ব্যক্তিত্ব নির্বাচিত হন।১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক সেন্টারের পক্ষ থেকে আলী নদভীকে সুলতান ব্রুনাই এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। আন্তর্জাতিক বহু ইসলামী প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সদস্য ছিলেন। তিনি একাধারে রাবেতায়ে আলমে ইসলামী এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক সেন্টারের সভাপতি ছিলেন। লাখনৌর বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুলউলুম নাদওয়াতুল-উলামা' এর রেকটর ও ভারতীয় মুসলনমানদের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফরম মুসলিম পারসোন্যাল ল' বোর্ডের সভাপতি ছিলেন। ইসলামের এই মহান সংস্কারক ১৯৯৯ সনের ৩১ ডিসেম্বর জুমার আগে সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াতরত অবস্থায় ইন্তিকাল করেন।