ভদ্রমহিলা কাউন্টার থেকে বেরিয়ে এলেন। দোকানের শাটারটা নামিয়ে মুখোমুখি দাঁড়ালেন অর্থির।মেয়ের মাকে চিনতে প্রমাণের প্রয়োজন হলেও মায়ের হয়নি। হুসনে আরা মেয়েকে বসতে দিয়ে বললেন, "আমিই তোমার মা।কিন্তু তুমি এখানে কেন এসেছো?" অর্থির ইচ্ছে হলো মায়ের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তে।তাকে জড়িয়ে ধরে বিগত পনেরো বছরের গল্প শোনাতে।জিজ্ঞেস করতে কেন তার মা তাকে রেখে চলে এলো?কিন্তু পারলো না মায়ের পরবর্তী বাক্যে। "আমি চাইছি না তুমি আমার সন্তানদের সামনে এসো।তারা তোমাকে দেখলে নানান ধরনের প্রশ্ন করবে।তোমার চেহারার সাথে আমার যে খুব মিল।" "আর আমি?আমি তোমার কেউ না?" "অর্থি তুমি বড় হয়েছো। আবেগের কথা কেন বলছো?আমি নিজ ইচ্ছায় তোমাকে ছেড়ে এসেছিলাম।কারণ তোমার জন্য আমি আমার জীবনের আটটা বছর নষ্ট করেছি।ভেবেছি তুমি হয়তো কারণ হবে আমার সংসারের।কিন্তু হতে পারোনি।তোমার দোষ নেই এখানে।বাবা মায়ের ইচ্ছেতে বিয়ে করে নেওয়ার পর আমার এবং তোমার বাবার মানিয়ে নিতে বেশ সমস্যা হচ্ছিলো।বিয়ে মানে কেবল শারিরীক মেলামেশার বৈধতা নয়।মানসিক সম্পর্কটা অধিক গুরুত্বপূর্ণ।সবাই বলল বাচ্চা নিয়ে নাও সব ঠিক হয়ে যাবে।কিন্তু তুমি হওয়ার পর সমস্যা আরো বেড়ে গেল।তোমার দাদীর টিপ্পনী কাটা, তোমার বাবার বাইরে মেলামেশা আমি নিতে পারতাম না।ডিভোর্স চাইলে সবাই বলতো মেয়েটার কি হবে?তোমার কথা ভেবে রয়ে গেলাম আরো কয়েক বছর।কিন্তু যেদিন জানতে পারলাম তোমার দাদী ইতিমধ্যে ছেলের বিয়ের ব্যবস্থা করে ফেলেছে কেবল তোমার সাত বছর হওয়ার পরেও দ্বিতীয় সন্তান হয়নি বলে সেদিন সমঝোতার বাঁধ ভেঙ্গে গেল।তোমাকে রেখে আমি চলে আসতে বাধ্য হয়েছিলাম।কারণ শিল্পী তোমাকে মেনে সংসার করবে রাজি হয়েছিল কিন্তু আমি তোমাকে নিয়ে এলে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ছিল তোমার জন্য।" "আমি কেবল সমঝোতার একটা কারণ ছিলাম?একজন সন্তান এতোটা তুচ্ছ?" "তোমার সম্পর্কে আমি সবসময় খবর রেখেছি।দিন শেষে নিজের বাবার মতো তুমিও আদিত্যকে হারিয়ে দিলে।কী হতো ওর সাথে জীবনটা কাটালে?সমঝোতা করে নিলে?বাইক নিয়ে এমন পাগলামো করে বেড়াচ্ছো। এটা কি ঠিক?" "আপনি করেছিলেন?আমার জন্য সমঝোতা?" "আমি তোমার সাথে পরে যোগাযোগ করবো।ওদের স্কুল থেকে আসার সময় হয়েছে তুমি এবার এসো।" হুসনে আরা নিজে শাটার উঠিয়ে দরজা খুলে দাঁড়িয়ে রইলেন।অর্থি বেরিয়ে যাওয়ার পূর্বে জিজ্ঞেস করল,'আর বাবা?নিজ ইচ্ছায় আমাকে রেখেছিল না কি বাধ্য হয়ে।' ' ডিভোর্সের শর্ত ছিল তোমাকে তোমার বাবা রাখবে আমি নিবো না।সে বাধ্য হয়েছিল ইচ্ছের বিরুদ্ধে তোমাকে রাখতে।' মুহুর্ত অপেক্ষা না করে ফিরে আসে অর্থি। হুসনে আরা তার হোটেলের ঠিকানা এবং ফোন নাম্বার চেয়েছিল।অর্থি হেসে কেবল একটা বার মায়ের হাত দুটো ধরে বলেছিল 'একাবার হাসবেন?আমি চাই যখন আমি মরে যাবো তখন আমার চোখের তারায় ভেসে উঠুক আপনার হাসি হাসি মুখের ছবিটা।' হুসনে আরা হাসতে পারেনি।তার ভীষণ কান্না পেলো প্রাক্তন বড় মেয়েটার জন্য।আচ্ছা মেয়েকে কি কখনো প্রাক্তন হয়?"
সাদিয়া খান সুবাসিনী। ডাকনাম মুন। সুবাসিনী নামে পাঠক মহলে পরিচিত এক সাধারণ মানুষ। বাবা মায়ের তিন সন্তানের মাঝে প্রথম সন্তান।কোনো এক ২১শে ফেব্রুয়ারির প্রভাতে জন্ম প্রিয় শহর টাংগাইলে।