সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গের মতোই মানুষের জীবন। বহু চড়াই-উৎড়াই পার হয়ে পুরো জীবনটা কেটে যায় একটি নির্দৃষ্ট অবস্থানে আসতে। হয়তো সে লক্ষ্যে পৌঁছায়, নয়তো নয়। কিন্তু জীবনের এই উত্থানপতনের পরিক্রমা, মানুষকে ভেঙ্গেচুরে কোথাও না কোথাও নিয়ে যায়। প্রেম, ভালোবাসা, স্বপ্ন, লক্ষ্য, অভিমান, বঞ্চনা সব কিছুতেই মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় একটি জীবন। আমি শুধু প্রতিটি অশ্রুবিন্দুকে, প্রেম ময় স্পর্শকে, প্রতিটি দীর্ঘশ্বাস আর শূন্যতাকে অনুভব আর বিশ্বাসের সাথে পাঠক হৃদয়ে পৌঁছে দিতে চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন যায়গায় এলোমেলো ছড়িয়ে থাকা বহু প্রিয় গল্পেরর অবস্থান, বুকের ভেতরটায় কেমন একটা নাড়া দিচ্ছিল। কে জানে জীবন আমাকে সময় দেবে কিনা আরো কিছু ভালো গল্প লেখার। একদিন মনস্থির করে ফেললাম। আমি আমার প্রিয় সন্তানদের একবার একই পরিমন্ডলে উপস্থিত করিনা কেন? গল্পগুলোর রচনা কাল ১৯৬০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত। কৈশোর থেকে প্রথম তারুণ্যে, বিন্দুতে সিন্ধু দেখার বয়স তখন। ভীষণভাবে যত্রতত্র লিখছি। শিশুরা নতুন হাঁটতে শিখলে যা করে। পড়া আর লেখা। হোচড় খেতে খেতে পথ চলা। চোখের সামনে যা ঘটছে সবটাই যেন প্রবলভাবে নাড়া দিচ্ছে আমাকে। চারদিকের মানুষ, প্রকৃতি পরিবেশ আমাকে যেন স্বস্তিতে থাকতে দিতো না। বিন্দুতে সিন্ধু দেখার তৃতীয় নয়ন নিয়ে নিরলস লিখতে লাগলাম। শিশু সাহিত্য, কবিতা, গান, গল্প, নাটক-গীতি আলেখ্য আরো কত কি। সাহিত্যের সব শাখায় তখন অবাধ বিচরণ আমার। অনেক চড়াই উৎরাই পার হয়ে একদিন জানলাম আমি এখন একজন ফরিদা হোসেন। এই সুদীর্ঘ সময়ের মধ্যে প্রায় এক যুগ ব্যক্তিগত কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলাম সাহিত্য জগত থেকে। সে জন্যে সমসাময়িকদের তুলনায় অনেকটা পিছিয়ে পড়েছি নিঃসন্দেহে। কিন্তু পথ চলা কখনো থেমে থাকেনা। সেই স্মৃতিময় কৈশোর থেকে আজ পর্যন্ত যে পথ চলা, তারই কিছু পুস্পচয়ন আজকের এই সম্ভার। আমি চেষ্টা করেছি অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে আমাদের কলুষিত সমাজের মুখোশ উন্মোচন করতে, চেষ্টা করেছি সৎ প্রেমে ঐশ্বরিক শক্তিকে মানব জীবনে প্রতিষ্ঠিত করতে। আর বলতে চেয়েছি জীবনতো একটাই একে কেউ করো না হেলা। জীবন মানেই দু’হাতে আঁধার ঠেলে শুধুই এগিয়ে চলা। সমস্ত প্রশংসাই সেই সৃষ্টিকর্তার। যাঁর অসীম রহমতে আজকের এই আমি।
ফরিদা হােসেন রচিত ও পরিচালিত প্রথম শিশুতােষ নাটক । সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি তিনি আবৃত্তি, সংবাদ পাঠ, শিশু ও মহিলাবিষয়ক অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন। ফরিদা হােসেন ১৯৬৬ এর অক্টোবরে দাম্পত্য জীবনে প্রবেশ করেন। মুক্তধারা, অঙ্কুর, নন্দন, মাওলা ব্রাদার্স, শিল্পতরু, হাতেখড়ি, শিকড়, মনন ও মাম্মী প্রকাশনী এবং তার নিজের আঙুম প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে তার বহু গ্রন্থ-অর্জন। করেছেন একুশে পদক’-সহ অনেক পুরস্কার। তার গল্প সংকলন, উপন্যাস, নাটক, শিশুসাহিত্য, অনুবাদসহ সব মিলিয়ে প্রায় ৫০টির মতাে প্রকাশিত গ্রন্থ রয়েছে। ফরিদা হােসেন ১৯৯৭ সালে স্কটল্যান্ড এবং ২০০৩ সালে মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সংস্থা পিইএন এর সম্মেলনে বাংলাদেশের। প্রতিনিধিত্ব করেন। মেক্সিকোতে ফরিদা হােসেন। রচিত ও পরিচালিত শিশুতােষ শর্টফিল্ম। ‘ফ্রেন্ডশীপ বিশেষ সুনাম অর্জন করে। তিনি আঞ্জুম প্রকাশনী, আঞ্জুমা টেলি নেটওয়ার্ক ও অবিনশ্বর সাহিত্য পত্রিকার সত্ত্বাধিকারী। বর্তমানে তিনি আলােকিত শিশু গড়ার লক্ষ্যে নিজস্ব রচনা ও পরিচালনায় নির্মাণ করছেন। শিশুতােষ ধারাবাহিক ‘রূপকথার দেশে। যার অধিকাংশ পর্ব ইতিমধ্যে বিটিভিতে প্রচারিত হয়েছে। এছাড়াও তিনি ব্যস্ত রয়েছেন সাহিত্য ও শিশুতােষ অনুষ্ঠান নির্মাণে।। ফরিদা হেসেন চট্টগ্রাম জেলার মিরেরশ্বরাই উপজেলার শাহেরখালী গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শ্রমিকনেতা ও আইএলও এর গভর্নিং বডির প্রাক্তন পরিচালক। মরহুম ফয়েজ আহমেদ ও মরহুম বেগম ফয়জুন্নেছার প্রথম কন্যা এবং ফেনী থেকে নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম মুহাম্মদ মােশাররফ হােসেন এর সুযােগ্য স্ত্রী। তিনি ফারাহ্ আঞ্জুম, ফারজানা আঞ্জুম ও ফারহানা আঞ্জুম স্ব স্ব অবস্থানে সুপ্রতিষ্ঠিত এই তিন কন্যা সন্তানের জননী।