ইতিহাসের ধারায় দিনাজপুর অঞ্চলের কমিউনিস্ট রাজনীতির ইতিহাস, সংশ্লিষ্ট কর্মীদের কথা, সংগঠকদের কথা এমনভাবে আড়াল করা হয়েছে যা হৃদয়বিদারক। বর্তমান বাংলাদেশের দিনাজপুর অঞ্চলের কমিউনিস্ট ইতিহাসের উপর কোনো গ্রন্থই নেই। অথচ এই দিনাজপুর অঞ্চল ছিল কমিউনিস্টদের ঘাঁটি। এছাড়াও আরেকটি বিষয় স্পষ্ট- দিনাজপুর অঞ্চল নিয়ে একাডেমিক যে কাজগুলো হয়েছে সেখানে দেখা যায় ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধের অভাব। সেদিক থেকে চিন্তা করলে বরদাভুষণ চক্রবর্তীকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। কিন্তু ইতিহাস তো ইতিহাসই, তাকে শত চেষ্টা করেও মুছে ফেলা যায় না। বিপ্লবী বরদাভুষণ চক্রবর্তী কতটা ত্যাগী ও মহৎপ্রাণ মানুষ হলে নিজের জন্মভূমি ছেড়ে সুখ-শান্তির হাতছানির ডাকে কখনও সাড়া দেননি! তবে বরদাভুষণ চক্রবর্তীকে অনেকটা ইতিহাসের পাড়ায় অবহেলাই করা হয়েছে, তা কেন করা হয়েছে সে প্রশ্নের উত্তর উহ্যই থাকুক। অন্যদিকে তারই সহধর্মিণী বিপ্লবী আশালতা চক্রবর্তীকে ইতিহাসে যথার্থ মূল্যায়ন করা হয়েছে। দুটো মানুষের মধ্যে এরকম বৈরিতা কেন? আলোচ্য গ্রন্থে সেই দিকটা নিপুন নির্মাণশৈলীর মধ্য দিয়েই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। আশা করছি পাঠক ও বোদ্ধামহলে আলোচ্য গ্রন্থটি গুরুত্ব বহন করবে এবং সঠিক ইতিহাসটা দেখতে পারবে।
অজয় কুমার রায় ১৯৮৫ সালের ২৫ আগস্ট ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার দেওনাপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন অজয় কুমার রায়। পিতা ললিন বর্মন, মাতা সেবা রানী। পিতা-মাতার ৩ সন্তানের মধ্যে তিনি জ্যেষ্ঠ। কিশোর বয়স থেকেই লেখালেখিতে নিবেদিত, সংস্কৃতিচর্চার সঙ্গে জড়িত। মাটি ও মানুষের প্রতি অনুরাগ তার মজ্জাগত। বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য প্রায় সব জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, সাহিত্য ম্যাগাজিন, ছোট কাগজ, গুরুত্বপূর্ণ সংকলনে অসংখ্য কবিতা, গল্প, ফিচার ও প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। জীবনের বেশিরভাগ অংশই শিল্প-সাহিত্য চর্চায় সম্পৃক্ত ছিলেন, এখনো পথ চলছেন বিরতিহীন। বাংলাদেশের সংস্কৃতিচর্চার সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি থেকে ২০১১ সালে ‘তরুণ লেখক প্রকল্প’র চতুর্থ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। সান্নিধ্য পেয়েছেন খ্যাতিমান অনেক লেখক ও দেশসেরা বুদ্ধিজীবীর। ছয় মাস দীর্ঘ এই কর্মশালা থেকে তিনি জীবনের বোধ খুঁজে পেয়েছেন। তার সাহিত্য-মানস ও পঠন-পাঠনেও ভূমিকা রাখে এই কর্মশালা। এছাড়াও ২০২৩ সালের ভারতের রাজধানী দিল্লিতে অনুষ্ঠিত সার্ক সাহিত্য সম্মেলনে বাংলাদেশের ১১ জনের মধ্যে তিনিও ছিলেন। এ সার্ক সাহিত্য সম্মেলনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচা গ্রন্থের জন্য সার্ক সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করে সার্ক কর্তৃপক্ষ। প্রকাশিত গ্রন্থ- ‘ধ্রুবতারা’, ‘পাশা ও দেহবাস’, ‘এই শহরে ভালোবাসা বিক্রি হয়’, ‘কতটা ভালোবাসলে ভালোবাসা কয়’ ও ‘ঠাকুরগাঁও জেলার ইতিহাস’ এবং ‘কমিউনিস্ট আন্দোলন ও বিপ্লবী বরদাভূষণ চক্রবর্তী’। সম্পাদনা গ্রন্থ : ‘তেভাগার প্রাণস্পন্দন হাজী মোহাম্মদ দানেশ’, ‘তেভাগার প্রাণপুরুষ গুরুদাস তালুকদার’ ও গণচীনের স্থপতি মাও সেতুংয়ের ‘অনুশীলন ও দ্বন্দ্ব সম্পর্কে’। দীর্ঘদিন সম্পাদনা করেছেন সাহিত্যপত্রিকা ‘টাঙ্গন’। সাহিত্যে বিশেষ অবদান রাখায় লাভ করেছেন ‘পীরগঞ্জ প্রেসক্লাব সম্মাননা-২০২২’ এবং পরমেশ^রী স্মৃতি সংঘ ও সাহিত্য সংসদ কর্তৃক ‘গুণীজন সম্মাননা-২০২১।’