নিজের কর্ম নিজে করো ভেবে অগ্রগামী হইও সবার আগে, ঘুণেধরা সমাজটাকে ভেঙে দেখিয়ে দাও যেন তারা জাগে। ~ফাতেমাতুন নূর নারীর হাহাকার একজন নারীর কত হাহাকার এক জীবনে, অপূর্ণতার পরেও অনেক কিছুই আশা করে সমাজে সহবস্থান করছে পুরুষের পাশাপাশি। একটু চাওয়া-পাওয়া, মানসম্মান, ভালোবাসা। সব কি চেয়ে পায়? আর এই না পাওয়া যেন বড়ই হাহাকার। দিনের পর দিন এই পুরুষশাসিত সমাজে নারীকে প্রতিনিয়ত জবাবদিহি করতে হয়। তাঁর নেই কোনো স্বাধীনতা ও মতামতের গুরুত্ব। ঘরযোগে সংসার কোণে পড়ে থাকতে হয়। আর হাহাকারের দীর্ঘশ্বাস ফেলতে হয়। দিন বদলের কথা বলে যায়,পালা বদল শেষে অপেক্ষায়, যে দিন এই সমাজ চিত্র পটে নারী মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবেন। সেই দিনই সাফল্য গাঁথার সুরে অহিংস মতান্তরে মনের কথা বলতে পারবে। নারীকে আজ বাজারের পণ্য বলে মনে করা হয়। অবহেলিত নিরীক্ষা যে,বিভিন্ন বিনোদন পণ্য মনে করে মুগ্ধতা আনতে অপশিল্পে তাকে বাধ্য করানো হয়। নানা অসামাজিক কাজ করার প্রেক্ষিতে বহু অনাচার গ্রস্তও হন।যেমন ধরুন, বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে নারীকে উপস্থাপন করা হয় সবচে' আগে। কোনো সিগারেট বা মোটরসাইকেল বা সেভিং ক্রিম থেকে শুরু করে পুরুষের সব পণ্যে নারীকে উন্মুক্ত ভাবে পরিবেশন করা হয়। এহেন সব কর্মে নারীর কোনো দরকার নেই? তবে কেনই বা তাঁদের আনতে দরকার হয়? কেন তাঁদের পন্থা অবলম্বন করে অর্থ উপার্জন এবং লালসা দিয়ে অপসংস্কৃতিতে উৎসাহ দেয়া হয়? সিনেমা,নাটকের বিভিন্ন দৃশ্যে, ইভটিজিংয়ের সময় নারীকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়, তা হয়তো বাস্তবে হয় না। কিন্তু এসব দেখে যুবসমাজেরা শেখে কিভাবে একজন নারীকে উত্ত্যক্ত করতে হয়। আগের যুগে দূর থেকে একজন মেয়েকে শিস দিয়ে, চোখ মেরে বা গোপনে প্রেমপত্র দিয়ে বিরক্ত করত। স্কুল,কলেজের সামনে ভিড় করে একনজর দেখার জন্য আড্ডাবাজি করত। এই ছিল আগে একজন মেয়েকে ইভটিজিং করার পদ্ধতি। কিন্তু, বর্তমান পরিস্থিতি উল্টো। এসবের বালাই নেই। আজ আর গোপনে প্রেমপত্রও দেয় না, বা স্কুল, কলেজে দাঁড়িয়েও থাকে না। সরাসরি মেয়েদের সামনে গিয়ে হাজির। প্রস্তাব যেটা দেবে সেটা মানতে হবে, না মানলে মেয়েটাকে অপমান, অপদস্ত, ওড়না ধরে টেনে দেয়া,এসিড নিক্ষেপ করে পুরো শরীর বা মুখ ঝলসে দেয়া, ফোনে বিভিন্ন নাম্বার থেকে কল করে হুমকি দেয়া আরো কত রকমের পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। তা একটু চোখ মেলে চাইলেই আমাদের চারপাশে এসব দেখতে পাওয়া যাবে। লক্ষণীয় মাত্রা যোগে কর্ম তবে, এখনো সমাজে কিছু গুণগ্রাহী বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ আছেন, যাঁদের কারণে আজও সমাজে টিকে আছেন নারীরা, নতুবা অনেক আগেই হারিয়ে যেত অতল গহ্বরে। মধ্যযুগীয়তে যেমন হতো, একজন নারীকে সবার আড়ালে থাকতে হতো।স্বামী মারা গেলে সেই মরা লাশের সাথে চিতায় যেতে হতো। নীরবে চোখের জল ফেলে শত বাধা সত্ত্বেও যেতে হতো স্বামীর লাশের সাথে স্বর্গ পরপারে। এ কষ্ট থেকে আজ মুক্ত নারীরা। কিন্তু এটা একদিনেই হয়নি দীর্ঘ আন্দোলনের পর কবি-ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রচেষ্টায় সেটা সম্ভব হয়েছে। তবে এই শিক্ষাটা ইসলামের। ভারতবর্ষে সুলতান মাহমুদ গজনবীর এক শীর্ষ প্রথম চিতার অনল থেকে একজন মৃত্যুযাত্রী অসহায় নারীকে বাঁচায়। তাঁর কাছে আমরা নারীরা চিরকৃতজ্ঞ । এখনও সমাজে কুসংস্কারে মেয়েরা লাঞ্চিতা। মা" হতে পারে না তখন অসহায় নারীকে দোষারোপ করে বন্ধ্যা বলে। আচ্ছা তাঁরা কি ভেবে দেখেছে! এ বিজ্ঞানের যুগে নানামুখী চিকিৎসার ফলে একজন অসহায় নারী "মা " হতে পারবে? কিংবা একজন পুরুষ তাঁরও সমস্যা হতে পারে, চিকিৎসাতে তাঁরও সমস্যাটা দূরীভূত হতে পারে। কিন্তু, করবে না। ঐ যে নারীকে সব দোষ চাপিয়ে দেয়া যেন সমাজের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়াও পদে পদে নানান পরীক্ষা দিতে হয়। যা বলে শেষ করা যাবে না। শিক্ষা-অশিক্ষা দুটোই রাসায়নিক ক্রিয়ার মত বিক্রিয়া করে চলেছে। আর বন্ধন পথের সন্ধানে তল্লাশি চালিয়ে রাজ্যভারে আনমোনা হয়।মাঝে অতীব পরাস্ত আপদের নামেই এই নারী সত্ত্বার অস্তিত্বে সাক্ষ্য দিয়ে চলে দীর্ঘশ্বাসে এবং হাহাকারে। সমাজিক দ্বায়বদ্ধতা শূন্যতা অনুভব করতে বলছি, এই একবিংশ শতাব্দীতে যেখানে বিশ্বে নারীরা এগিয়ে, সেখানে আমরা পিছিয়ে আছি। শুধুমাত্র কুসংস্কারের জন্য! তবে কি মুক্তি নেই এই সমধিকারের এই লিঙ্গ বৈষম্যের? কবে খোলা আকাশের বিশুদ্ধ বাতাস গ্রহণ করতে পারবে? কবে তাঁরা নিজস্ব সত্ত্বার মতামতটি প্রকাশ করতে পারবে? তবে কবে এই বৈষম্য হাহাকারের বুক চিরে নব দিগন্তের দেখা পাবে?