কিছুদূর যাওয়ার পর একটি নৌকায় উঠতে হলো। বইঠা—লগির নৌকা। এ পথেই নাকি ঘণ্টাখানিক যেতে হবে। যেতে যেতে এলাকার বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি দেখা যাবে। খোলা নৌকায় ছাতা মাথায় বসে আছি। নৌকা চলতে থাকে বইঠার ছলাৎ ছলাৎ পানি ভাঙার শব্দ তুলে। আকাশে শেষ শরতের রোদ—মেঘের খেলা। সূর্য হঠাৎ হঠাৎ উঁকি মেরে আবার শরতের আকাশে ভাসমান মেঘের কাশবনে লুকিয়ে পড়ে। দুপাশে কাছে ও দূরে শ্যামল—সবুজ গ্রামীণ জনপদ। বৃক্ষরাজিরা মৃদুমন্দ বাতাসে মাথা দোলাচ্ছে। কোথাও সাদা আর কোথাও লাল শাপলা বিলের বুকে ভাসমান নৃত্যরত। সে এক অপরূপ দৃশ্য! চেয়ারম্যান জানালেন, এটি কান্তার বিল। সারা বছরই পানি থাকে। এখানের কই মাছ চলনবিলের কইয়ের চেয়েও সুস্বাদু। আর শীতকালে অতিথি পাখির কলরবে এলাকাটি মুখরিত থাকে। আমার ভালো লাগল রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে এমন বিলের অবস্থান দেখে। আমি বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাগলাম। সেই সাথে বন্যা পরিস্থিতিও অবলোকন করতে থাকি। বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় বিলের পানিও বেশ নিচে নেমে গেছে। পানি যে কিছু কিছু বাড়িঘরে ঢুকেছিল তার স্পষ্ট ছাপ রয়েছে বিলের চারধারের গাছপালা আর বাড়িঘরের গায়ে। তবে ক্ষয়ক্ষতি মারাত্মক না। আমাদের নৌকা চলতে থাকে। বন্যার ক্ষতির চেয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য আজ আমাকে বেশি টানছে। আমার মনের অবস্থা রাজনীতিবিদ শিক্ষিত এই চেয়ারম্যান বুঝে ফেলেছেন। টুকটাক কথাবার্তার ফাঁকে তিনি জানালেন— ভালুকগাছির চকপাড়া গ্রামে অতিথি পাখির অভয়ারণ্য আছে। আমি যেতে চাইলে সেখানেও আজ নিয়ে যেতে পারেন। আমি জানতে চাইলাম, সেখানে কী ধরনের পাখি রয়েছে। চেয়ারম্যান জানালেন, নানা জাতের পাখি; যেমনÑ শামুকখোল, পানকৌড়ি, বক ও দেশীয় জাতের পাখি। তবে সিংহভাগই শামুকখোল। আমি আর না করলাম না। আজ মিস করলে হয়তো আর আসাও হবে না। একসময় নৌকা ছেড়ে আমরা মটর সাইকেলে পাখি দেখতে ছুটলাম।
আতাউর রহমান কানন, জন্মস্থান-শরীফবাগ, ধামরাই, ঢাকা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল থেকে এসএসসি, ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি অনার্সসহ ভূগােলে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি চাকরিজীবী। কবিতা, ছড়া, নাটক, গান, প্রবন্ধ, উপন্যাস প্রভৃতি গ্রন্থ ইতােমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। তার প্রকাশিত উপন্যাস ‘কপাল’ ‘অবেলা বসন্ত’, ‘শেষের প্রেম এবং ঢেউ ভাঙ্গা প্রেম’ পাঠকের প্রচুর সুনাম কুড়িয়েছে। এ পর্যন্ত তার ১২টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তার লেখায় ১২টি গান নিয়ে এই বৃষ্টি ভেজা দিন’ নামক সিডি বের হয়েছে। এতে দেশের খ্যাতিমান ১২জন শিল্পী কণ্ঠ দিয়েছেন। সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি সহবত সাহিত্য পুরস্কার’ ‘পুঠিয়া সাহিত্য পদক’ ‘অরুণিমা সাহিত্য পুরস্কার’ ‘রাজশাহী সাহিত্য পরিষদ পদক, কবি বাবু ফরিদী সাহিত্য পদক এবং নির্ণয় শিল্পীগােষ্ঠী স্বর্ণপদক পেয়েছেন। এছাড়া অমর একুশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০০০ উপলক্ষে কবিতার জন্য তিনি বাংলাদেশ জাতীয় লেখক ফোরাম কর্তৃক পুরস্কৃত হয়েছে। তিনি International Biographical Centre, Cambridge, England কর্তৃক International Man of the year 2000/2001 খেতাব প্রাপ্ত এবং একই সংস্থা কর্তৃক The 20th Century Award-ও পান। তিনি পুঠিয়া সাহিত্য পরিষদ, রাজশাহী সাহিত্য পরিষদ, কবিতা ক্লাব, পাবনা এবং উত্তরবঙ্গ সংস্কৃতি পরিষদ-এর জীবন সদস্য ও বাংলা একাডেমীর সদস্য। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ বেতার ও টিভির একজন তালিকাভুক্ত গীতিকার । জনাব কানন যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, মালয়েশিয়া, ইউক্রেন, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, তুরস্ক, ভারত, নেপাল, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশ ভ্রমণ করেছেন। জনাব কানন রচিত ‘মেঘের কোলে রােদ উপন্যাসটি পাঠক সমাদৃত হবে বলে আশা করছি।