প্রতিটি নর-নারী সবল অথবা দুর্বল যা-ই হোক তার পৃথিবীর আগমন একই প্রক্রিয়ায় আবার ঠিক তেমনই আরাম আয়েশ অথবা অবহেলা অনাদরে প্রস্থান এই চিরন্তন রীতির কোনো পরিবর্তন ঘটানোর ক্ষমতা আজও পর্যন্ত কেউ অর্জন করতে পারেনি। তাই সৃষ্টির গোড়া থেকেই দু'টি শ্রেণী এই পৃথিবীর বিচরণ ক্ষেত্রে প্রবাহমান। ক্ষুদ্র সংখ্যাটি অত্যন্ত প্রবল, বৃহত্তর অংশটি দারুণ দুর্বল। স্রষ্টার এই রহস্যময় সৃষ্টির কি কারণ? একটি মাত্রই কারণ সৃষ্টিকে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখে দাঁড় করানো। একে অন্যের প্রতি যে অধিকার রয়েছে তা পুরোপুরি আদায় করাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার শর্ত। কিন্তু সবল সব সময় তার প্রতি অর্পিত দায়িত্ব বিস্মৃত হয়ে দুর্বলকে শোষণ নির্যাতন করে মানবতার মৃত্যু ঘটিয়ে অশান্তি সৃষ্টি করে রাখে। বিশেষ করে গরিব দেশগুলোর ক্ষুধার্ত মানুষকে পুঁজি করে ধনী দেশগুলো দারিদ্র্য বিমোচনের নামে সুশীল সমাজ নামের একদল দালাল সৃষ্টি করে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা মহাজনী ব্যবসা ভিন্ন নামে ভিন্ন কৌশলে শোষণের মাত্রা একই মাপকাঠিতে চালানো হচ্ছে। পৃথিবীর শত সহস্র সৃষ্টি কেবলমাত্র মানুষের কল্যাণের জন্য প্রতি নিয়ত প্রথানুযায়ী নিজেকে সোপর্দ করে দিতে সদা তৎপর। আর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ হয়ে মানুষের প্রতি অবিচার, শোষণ নিপীড়ন করতে তাদের আত্মা এতটুকু আলোড়িত হয় না। এই সবল মানুষের কালো হাত গুড়িয়ে দিতে দুর্বলের নতজানু ভূমিকা ত্যাগ করে ধৈর্য, সাহস ও কর্মদক্ষতা সৃষ্টির মধ্যে তা সম্ভব। এর জন্য হতে হবে একতাবদ্ধ আর সামান্য সংখ্যক হলেও একদল আদর্শবাদী জ্ঞানীগুণী, ত্যাগী মানবপ্রেমিক। যারা এই সব দুর্বল অসহায়দের ঝাপসা চোখে ঘুটিয়ে তুলবে আশার আলো। সমাজে এমন ত্যাগী মানুষেরও অভাব নেই। হতাশা আর দুর্বলতা সৃষ্টির জড়তা কাটিয়ে তারা যদি এই আলোময় পৃথিবীর বুকে দুর্বলদের শান্তির নীড় রচনা করার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে আসে তাহলে শোষকের হাত নিস্তব্ধ হয়ে যাবে, অন্ধকার দূর হয়ে আলোয় ভরে যাবে এই বিশ্ব। তারই একটা চিত্র এই সামাজিক উপন্যাসখানিতে দেখানো হয়েছে।
বজলুর রহমানের জন্ম ৭ জুন ১৯৫৪ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মৈন্দ গ্রামে। সমাজের বঞ্চিত মানুষদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে যুক্ত আছেন চার দশকেরও বেশি সময় ধরে সমাজের পিছিয়ে পড়া চর্মকার সম্প্রদায় এবং রিকশা-শ্রমিকদের নিয়ে গড়েছেন সংগঠন। শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গেই কাটে এই লেখকের দিনগুলাে। নিজের বাড়িতেই গ্রামের ছেলে-মেয়েদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে গড়ে তুলেছেন কিন্ডারগার্টেন স্কুল। দিনের শুরু হয় ছােট্ট সােনামণিদের অ আ ক খ শুনতে শুনতে। আর দিনের শেষ হয় শ্রমজীবী মানুষের আড্ডা-গল্প আর সমাজ-সংস্কারের কাজের মধ্য দিয়ে। ব্যক্তিজীবনে বজলুর রহমান দুই পুত্র সন্তানের জনক। তার স্ত্রী ফজিলাতুন্নাহার বাংলাদেশ নারী মুক্তি সংসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি।