স্বাধীন হবার পর বিখ্যাত ফরাসি দার্শনিক আন্দ্রে মার্লো ঢাকায় এসেছিলেন যুদ্ধবিদ্ধস্ত বাংলাদেশ দেখার জন্য।
তখন ঘরোয়া এক বৈঠকে মার্লো বলেছিলেন, 'আপনাদের দেশটাকে পাকিস্তানের হানাদারেরা ধ্বংসস্তূপে পরিনত করে গেছে। এই ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে আপনারা শীঘ্রই নতুন দেশ গড়ে তুলতে পারবেন।
কিন্তু, পাকিস্তান শাসকরা তাদের ২৪ বছরের শাসনে আপনাদের রাজনৈতিক কালচারে যে সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতার বিষ ঢুকিয়ে গেছে তার দ্রুত বিচ্ছেদ ঘটাতে না পারলে আপনাদের স্বাধীনতার চেহারা পাল্টে যাবে। আপনাদের সমাজজীবনে ও মানসিকতায় বিনাযুদ্ধে শত্রুরা অনুপ্রবেশ করবে, রাষ্ট্রব্যবস্থা আবার দখল করতে চাইবে।'
'বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতীয়তাবাদের সীমানা' প্রবন্ধে লিখেছেন একদিন সত্যজিৎ রায় বললেন, 'বঙ্গবন্ধু মানুষটি চরিত্রে এবং ব্যক্তিত্বে বিশাল। তিনি শুধু তোমাদের বঙ্গবন্ধু নন, আমাদেরও বঙ্গবন্ধু। এককালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ যেমন ছিলেন সব বাঙালির বন্ধু। তেমনি বঙ্গবন্ধুও বিশ্বের সকল বাঙালির বন্ধু।'
আরেক প্রবন্ধে তিনি বলেছেন, 'ভাষা আন্দোলন সংগঠনে মুজিব ভাইয়ের সঙ্গে ফরিদপুরের বিভিন্ন স্থানে গেছি।...। ভাষা আন্দোলনে ১৯৪৮ সাল থেকে শেখ মুজিবের যে অবিস্মরণীয় অবদান, বদরুদ্দীন উমর তাঁর ভাষা আন্দোলন সম্পর্কিত গ্রন্থে তা মুছে ফেলার চেষ্টা করেছেন।
আবদুল গাফফার চৌধুরীর জন্ম ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশাল জেলার উলানিয়া গ্রামে এক রাজনৈতিক পরিবারে। পিতা হাজী ওয়াহেদ রেজা চৌধুরী অবিভক্ত বাংলার বরিশাল জেলা কংগ্রেস কমিটি ও খেলাফত কমিটির সভাপতি ছিলেন। অসহযােগ আন্দোলনে তিনি কারাবরণ করেন । গাফফার চৌধুরী যখন চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র, তখন কবিতা লেখা শুরু করেন। ষষ্ট শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক নবযুগের ছােটদের পাতায় তার লেখা প্রথম ছাপা হয়। তারপর স্কুলের ছাত্র থাকা কালেই তার লেখা কলকাতার। সওগাত, ঢাকার সােনার বাংলা (অধুনালুপ্ত) পত্রিকায় ছাপা । শুরু হয় । এসএসসি পাশের পর তিনি ঢাকায় আসেন এবং সওগাত, মােহাম্মদী, মাহে লও, দিলরুবা প্রভৃতি মাসিক পত্রিকায় তার গল্প উপন্যাস ছাপা হতে থাকে। বাজারে তার বেশ কয়েকটি গল্প ও উপন্যাস, ছােটদের এডভেঞ্চার কাহিনী, প্রবন্ধ সংগ্রহ, স্মৃতিকথা রয়েছে এবং পাঠক সমাজে আদৃত হয়েছে। তিনি বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, ইউনেস্কো পুরষ্কার, শেরেবাংলা পদক, বঙ্গবন্ধু পদক এবং একুশের পদক পেয়েছেন এবং বিদেশেও নানা সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। তিনি অমর একুশের গান-‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানাের’ রচয়িতা। বঙ্গবন্ধু-হত্যার উপর লেখা নাটক ‘পলাশি থেকে ধানমন্ডি’ দারুন জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তিনি বহু সাহিত্য মাসিক, সাপ্তাহিক ও দৈনিক পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন । বেতার ও টেলিনাটক লিখেছেন। তবে বর্তমানে তিনি একজন সার্বক্ষণিক কলামিষ্ট । ঢাকায় চারটি জাতীয় দৈনিকে এবং লন্ডন ও নিউইয়র্কে একাধিক সাপ্তাহিক পত্রিকায় তার রাজনৈতিক বিষয়ে লেখা কলাম নিয়মিত প্রকাশিত হয়। তার কলাম দেশে-বিদেশে বাংলাভাষাভাষী পাঠকের কাছে দারুন জনপ্রিয়। গাফফার চৌধুরী এখন লন্ডনে বাস করেন। তিনি এক ছেলে চার মেয়ের পিতা। বঙ্গবন্ধুর জীবন নিয়ে একটি পূর্ণ দৈর্ঘ্য ছবি নির্মাণের কাজে তিনি এখন ব্যস্ত।