টুসির একটা সংসার পেতে খুব ইচ্ছে হয়,হয়তোবা লোভও হয়। নাজমা বেগমের মতো ঝুল বারান্দাঅলা একটা ভালোবাসার সংসার, নূরীর মতো ছোট্ট এক ঘরের একটা সংসার। নাজমা বেগম এই বয়সে এসেও বারান্দায় দাঁড়িয়ে স্বামী সন্তানের জন্য অধীর হয়ে অপেক্ষা করে।টুসিরও কারো জন্য এমন করে অপেক্ষা করতে মন চায়। মন চায় নূরীর মতো করে ছোট্ট তুলতুলে একটা হাতের আঙুল ধরে হাঁটতে। বুদ্ধি হবার পর থেকেই সে তীব্র এক অশান্তিতে ছটফট করছে।মায়ের সাথে তার দূরত্ব, বাবা-মায়ের নির্লিপ্ত সম্পর্ক, বাবার পরনারীতে আসক্তি - সব মিলে সংসারটা তার কাছে একটা নরক মনে হয়েছে। তারপরও অবচেতন মনেই সংসারের স্বপ্ন পুরণের জন্য সে নরক থেকে নরক ছুটেছে। অথবা এক নরক থেকে বাঁচতে আরেক নরকের দ্বারে পৌঁছে গেছে।আবার সেই নরকের ভেতরই সুখের সংসার গড়ার স্বপ্ন দেখেছে। তার সেই স্বপ্ন কখনো হয়েছে রক্তাক্ত, ফালিফালি।আবার কখনো মাটি চাপা পড়েছে।তারপরও তার বেহায়া, বেপরোয়া, দূর্বিনীত মন আবারও একটা ভরা সংসারের স্বপ্নে বিভোর হয়। সংসার এক অদ্ভুত এক মোহ, একটা মায়া। এ মায়ায় আটকে কেউ চিরদিন শুদ্ধ বাঁচতে পারে না। আবার অশুদ্ধ , পাপী হয়েও তাঁর মৃত্যু হয় না।মানুষ দেবতা নয়, আবার সে অসুরও নয়।মানুষ, সে চিরকালই মানুষ। কখনো সে অন্যের প্রতি সীমাহীন রাগ, ক্ষোভ, ঘৃণা, অসম্মান, অবহেলা, নিগ্রহ নিয়েও বছরের পর বছর একসাথে কাটিয়ে দেয়। আবার কখনো সব ভুলে তার ভেতর থেকেই জেগে ওঠে স্বপ্ন, ভালোবাসা, মায়া, আশা, ভরসা। জগত সংসারে মানুষের লোভ, নির্মমতা, জিঘাংসা, প্রতিহিংসার মাঝেও নতুন করে জেগে ওঠা সুখ স্বপ্ন আর ভালোবাসার সাক্ষী এই "বারান্দানামা"।