মানুষ তার জীবন বাঁচানোর জন্য যে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে, সেই কাজটিই হচ্ছে ক্যারিয়ার। আরো সহজ করে বললে, মানুষ জীবন বাঁচানোর জন্য জীবিকা হিসেবে কোনো না কোনো কাজ করে থাকে, এই কাজটা করার মাধ্যমে কোনো একটি বিষয়ে নিজেকে দক্ষ করে তোলে এবং এই দক্ষতা কাজে লাগিয়ে জীবিকার পথ বেছে নেয়। জীবিকার পথ হিসেবে মানুষ যে কাজটি নির্বাচন করে থাকে, এটিই হচ্ছে তার ক্যারিয়ার।
যেমন―একজন ইঞ্জিনিয়ার জীবিকা হিসেবে বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং কাজ করে বা একজন ব্যবসায়ী মেধা খাটিয়ে কোনো ব্যবসা করে। এগুলোই হচ্ছে তাদের ক্যারিয়ার। ক্যারিয়ারসম্পন্ন মানুষ দেশ ও জাতির সম্পদ। ব্যক্তির এই ক্যারিয়ার আপনা-আপনি গড়ে ওঠে না। এর জন্য প্রয়োজন ধারাবাহিক প্রচেষ্টা। এর পাশাপাশি প্রয়োজন কিছু প্রয়োজনীয় গুণ ও দক্ষতার অধিকারী হওয়া, যাকে আমরা ক্যারিয়ার গঠনের উপাদান ও কৌশল বলে অভিহিত করতে পারি।
আর এই ক্যারিয়ার গঠনের জন্য অনেক পথ খোলা আছে। পৃথিবীতে অসংখ্য পেশা আছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আপনি আপনার পেশা নির্বাচন করেছেন কি? করে না থাকলে কীভাবে করবেন? এ জন্য প্রথমেই আপনাকে জানতে হবে বর্তমানে কী কী ধরনের ভালো পেশা আছে। কোন কাজগুলোর চাহিদা বেশি বা ভবিষ্যতে কোন পেশার চাহিদা আরো বৃদ্ধি পাবে। পৃথিবীতে নানা রকমের পেশা রয়েছে―ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং, শিক্ষকতা, আইন, সাংবাদিকতা, কৃষিসহ অগণিত। বর্তমানে এর সাথে যুক্ত হয়েছে অনলাইনে অনেক কাজ। যেমন―গ্রাফিক্স ডিজাইন, গ্রাফিক্স ওয়েভ ডিজাইন, ওয়েভ ডেভেলপমেন্ট, অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট, ই-কমার্স, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, অনলাইন বা ডিজিটাল মার্কেটিং, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, থ্রিডি অ্যানিমেশন, গেম ডেভেলপমেন্ট, ফেসবুক মার্কেটিং ছাড়াও অসংখ্য অনলাইন ব্যবসা।
পড়ালেখা যে ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার স্থির করে, তা পুরোপুরি ঠিক নয়। পড়ালেখার গতি ঠিক রেখে নিজেকে ভবিষ্যতের ক্যারিয়ার গঠনের জন্য তৈরি করাই আপনার জীবনের মূল আদর্শ। তা ছাড়া ক্যারিয়ার অর্থ শুধু পেশা নয়, ব্যক্তির সহজাত গুণাবলি, জীবনের লক্ষ্য, উচ্চাকাক্সক্ষা, লালিত বিশ্বাস, আদর্শ, সন্তুষ্টি, মানবিক দায়িত্ব ইত্যাদি বিষয় ক্যারিয়ারে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ক্যারিয়ার পরিপূর্ণভাবে বিকাশের জন্য আগে নিজেকে জানতে হবে।
নিজের ভালো লাগা, মন্দ লাগা, ব্যক্তিত্ব, রুচি, মূল্যবোধ, আগ্রহের বিষয়, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য―যেসব বিষয় আপনার কাজকে প্রভাবিত করে বা করবে। কাজের ধরন, ক্যারিয়ার গড়ার সম্ভাবনা, আর্থিক নিরাপত্তা, কাজের পরিবেশ, সে পেশায় আসতে হলে কী ধরনের যোগ্যতা, দক্ষতা, সামর্থ্য, আত্মবিশ্বাস, অভিজ্ঞতা আর শিক্ষাগত যোগ্যতা দরকার।
নিজের সামর্থ্য, পছন্দ এবং বাজারে চাকরির সহজলভ্যতা অনুযায়ী ক্যারিয়ার নির্বাচনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। পেশা অনুযায়ী পড়াশোনা, দক্ষতা বাড়ানো এবং প্রাসঙ্গিক অভিজ্ঞতা অর্জন করা খুবই জরুরি। আসল কথা হলো, জীবনে সফল হওয়ার জন্য নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তোলা আবশ্যক।
আত্মবিশ্বাস রেখে দক্ষতাভিত্তিক কাজের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারলেই প্রতিষ্ঠা লাভ করা সম্ভব। তাই প্রয়োজন পেশাকে সামনে রেখে সে ধারা অনুযায়ী পড়ালেখা করা। নিজের যোগ্যতা, দক্ষতা এবং পছন্দমাফিক ক্যারিয়ার ঠিক করা উচিত।