"আলাওল রচনাবলী" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ ড. মােহাম্মদ আবদুল কাইউম ও ড. রাজিয়া সুলতানা সংকলিত এবং সম্পাদিত ‘আলাওল রচনাবলী’ বাংলা একাডেমীর রচনাবলীর প্রকাশনা-ক্ষেত্রকে মধ্যযুগ পর্যন্ত বিস্তৃত করেছে। বাংলা একাডেমী উদ্যাপিত আলাওলের চারশততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এ-রচনাবলীর প্রকাশও বিশেষ তাৎপর্যবহ। লক্ষণীয়, ড. মুহম্মদ এনামুল হকই প্রথম আলাওলের জন্মকাল ১৬০৭ খ্রিষ্টাব্দ বলে অভিহিত করেন। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান বাঙালি কবি আলাওল (১৬০৭–১৬৮০) তাঁর সমগ্র জীবনে রাগ-তাল বিষয়ক পদাবলী রচনা ছাড়াও প্রায় ছয়টি কাব্য রচনা করেন। কাব্যসমূহ বর্তমান রচনাবলীতে কালানুক্রমিক সংকলিত হয়েছে। কাব্যগুলি হচ্ছে ‘পদ্মাবতী’ (মালিক মুহম্মদ জায়সী প্রণীত হিন্দি কাব্য ‘পদ্মাবত’-এর ভাবানুবাদ), ‘সতী-ময়না লােরচন্দ্রাণী’র শেষাংশ, ‘সপ্ত পয়কর’ (নিযামী গঞ্জভীর ফারসি কাব্য ‘হাফত পায়কর’-এর ভাবানুবাদ), সিকান্দরনামা’ (নিযামী গঞ্জভীর কাব্য সিকান্দরনামা'র ভাবানুবাদ), ‘তােহফা (ইউসুফ গদা রচিত ফারসি কাব্য ‘তুহফাতুন-নসাঈ’র অনুবাদ) এবং ‘সয়ফুল মুলুক বদিউজ্জামাল’ (আরব্যোপন্যাসের কাহিনী অনুসরণে রচিত মৌলিক কাব্য)। সবশেষে রয়েছে। ‘রাগতালনামা ও পদাবলী’ (সংকলন)। পরিশিষ্টে রয়েছে আলাওলের বিভিন্ন কাব্যে ব্যবহৃত প্রাচীন ও দুরূহ শব্দাবলির অর্থ। সতেরাে শতকে আলাওল তাঁর কাব্যসমূহ আরাকানে। (বর্তমান মিয়ানমার) বসে রচনা করেন। সে কাব্যসমূহ লিপিকরের হাত ঘুরে ঘুরে বিস্তীর্ণ ভূখণ্ড পেরিয়ে, শতাব্দীকাল অতিক্রম করে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে এসে পৌঁছেছিল। লিপি পরম্পরায় পুঁথিতে প্রচুর পাঠবিকৃতি ঘটেছে। বিভিন্ন পুঁথির পাঠ-পর্যালােচনা করে কাব্যসমূহের লৌকিক পাঠ সম্পাদিত হয়েছে। সাধারণ পাঠকের কাছে আলাওলের অপরিজ্ঞাত কাব্যসমূহ এই প্রথম একসঙ্গে তুলে ধরা হলাে। আলাওলের রচনাবলীর বিস্তৃত ভূমিকায় কবি-পরিচিতি ছাড়াও রয়েছে প্রতিটি কাব্যের পরিচিতি, উৎসপরিচিতি এবং কাব্যসংক্ষেপ। ভূমিকায় অন্তর্ভুক্ত ‘কবিকৃতি' অংশে রয়েছে আলাওলের কবি-কৃতির বিচার ও মূল্যায়ন।
ড. মোহাম্মদ আবদুল কাইউম ও ড. রাজিয়া সুলতানা সংকলিত এবং সম্পাদিত 'প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলা ভাষার অভিধান' বাংলা একাডেমীর অভিধানের প্রকাশনা-ক্ষেত্রকে সম্প্রসারিত করেছে। বাংলা অভিধানের ইতিহাসে লক্ষণীয়, বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন অভিধান প্রণয়নের পেছনে উদ্দেশ্য ও সংকলন পদ্ধতি ভেদে, অভিধানের প্রকৃতিও ভিন্ন ভিন্ন। প্রাচীন ও মধ্যযুগের বিভিন্ন ধারার কাব্য থেকে শব্দসম্ভার চয়ন করে এই অভিধান প্রণীত হয়েছে। আঠারো শতকের কিছু চিঠিপত্র, অভিধান এবং গদ্যগ্রন্থ থেকেও শব্দাবলি সংকলিত হয়েছে। অভিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার শীর্ষশব্দ এবং তার প্রয়োগ-উদাহরণ। এতে রয়েছে প্রতিটি শব্দের বানানভেদ, ব্যুৎপত্তি বা উৎস, পদ পরিচয় এবং উদাহরণসহ বিভিন্ন অর্থ। শব্দার্থ ও ব্যুৎপত্তি নির্ধারণে প্রায় পঞ্চাশটি অভিধানের সাহায্য নেওয়া হয়েছে। সংজ্ঞামূলক বা সুভাষিত প্রয়োগ-উদাহরণও প্রয়োজনবোধে উৎকলিত হয়েছে। সংকলিত শব্দাবলি শুধু পুরাতাত্ত্বিক বা সমাজতান্ত্রিক তথ্যই তুলে ধরে নি, তাতে ব্যাকরণ্যগত বা ভাষাতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যও বিধৃত হয়েছে অভিধানটি স্বাভাবিক ভাবেই প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলা ভাষা-সাহিত্যের পঠন-পাঠন এবং গবেষণায় বিশেষ সহায়ক হবে। অনুসন্ধিৎসু ও ঐতিহ্য-সচেতন পাঠকের মনেও অনেক চিন্তার খোরাক যোগাবে। অভিধানে লক্ষ্য করা যাবে, মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের কবিগণ শব্দের সম্ভাবনাকে কীভাবে আবিষ্কার করেছেন-- নতুন নতুন অর্থে শব্দকে ব্যবহার করেছেন।