চলচ্চিত্র দুনিয়ায় ইরান একটি অভূতপূর্ব বিস্ময়ের নাম। অধিকাংশ মানুষ মনে করতেন ইরান যেহেতু রক্ষণশীল দেশ, খুব স্বভাবতই ইরানের নারীরা পর্দাপ্রথার তলে চাপা পড়ে এবং জনসাধারণ কঠোর নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে অনেক কর্মক্ষেত্রের ন্যায় চলচ্চিত্র জগত থেকেও শত সহস্রগুণ পিছিয়ে থাকবে। কিন্তু অভাবনীয় বিষয় হচ্ছে সিনেমায় কল্পনার এই জগতকে তুচ্ছ করে ইরান এগিয়েছে বীর বিক্রমে। রক্ষণশীল মানেই কিন্তু গোঁড়ামি নয়; ফলে নতুন ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণ পর্ব উত্থানের সাথে সাথে বর্তমান ইরানে রেকর্ডসংখ্যক ফিল্ম স্কুল গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছে। ইরানি চলচ্চিত্রের কাহিনি বিন্যাস চলচ্চিত্রবোদ্ধাদের নিয়মিত ভাবাতে বাধ্য করছে। বিশ্বের দেশে-দেশে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইরানি চলচ্চিত্র নিয়ে পাঠ্যক্রম চালু হয়েছে। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। একসময় বিটিভি’তে শুক্রবার বিকেলে প্রচারিত ইরানি চলচ্চিত্র দেখে ইরানি চলচ্চিত্রের ভক্ত বনে যাওয়া দর্শকের সংখ্যা এদেশে নেহাত কম নয়! ইরানের বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার মাজিদ মাজিদি এদেশে পরিচিত তাঁর বিখ্যাত চিলড্রেন অব হ্যাভেন চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। বাংলাদেশের অগণিত দর্শক ও সিনেমাবোদ্ধা চলচ্চিত্রটি একাধিকবার উপভোগ করেছেন। দর্শক, পাঠক ও গবেষকদের কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশে প্রচলিত নাম কালোবাজারি (ইরানি নাম : বাদুক) চলচ্চিত্রের সংলাপগুলো পুস্তক আকারে বের হলো।
ড. মুমিত আল রশিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। বাংলাদেশি দর্শকদের জন্য তিনি ফারসি থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন- 'ইউসুফ-জুলেখা', 'বিবি মরিয়ম', 'ইসা নবি', 'আসহাবে-কাহাফ', 'কারবালা কাহিনী' ও 'শেহেরজাদ ফরহাদ'। এছাড়া প্রায় ৪০টি ইরানি সিনেমা বাংলায় অনুবাদ করেছেন; দেশ-বিদেশে প্রকাশিত মৌলিক গবেষণা প্রবন্ধের সংখ্যা ১৮টি। ২০১৮ সালে তার হাত ধরেই এদেশে প্রথম ইরানি সিনেমার শ্যুটিং শুরু হয়। এ সময় ইরানের বিখ্যাত নারী পরিচালক নার্গিস অবিয়ার তাঁর চলচ্চিত্র 'শাবি কে মহ কমেল শোদ'-এর ২২ জন কলাকুশলী নিয়ে বাংলাদেশে আগমন করেন। এছাড়া 'দিন দ্য ডে' চলচ্চিত্রে ইরানি অংশের উপদেষ্টা এবং জয়া আহসান অভিনীত ইরানি সিনেমা 'ফেরেশতে'-র চিত্র নাট্যকার ও উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৮ সালে লেখকের ফারসি থেকে বাংলায় অনূদিত 'শারমে বুদা' প্রামাণ্যচিত্রটি মধ্যপ্রাচ্যের কান খ্যাত আন্তর্জাতিক ফজর চলচ্চিত্র উৎসবের ৩৬তম আসরে তেহরানের চরছু কমপ্লেক্সের ভাহদাত হলে প্রদর্শিত হয়। প্রামাণ্যচিত্রটি রোহিঙ্গাদের নিয়ে নির্মিত। দীর্ঘ দিন ইরানে অবস্থানের ফলে লেখক ইরানি জনগণের লোকজ সংস্কৃতি, উৎসব, রীতিনীতি ক্ষেত্রসমীক্ষার দৃষ্টিতে প্রত্যক্ষ করেছেন। মূল ফারসি গ্রন্থের ভিত্তিতে ইরান ও ইরানের চলচ্চিত্র নিয়ে বেশকিছু বই প্রকাশিত হয়েছে এবং কয়েকটি মৌলিক ও অনুবাদ গ্রন্থ অচিরেই প্রকাশিত হবে।