ইসমত চুগতাইরে চিনছিলাম তার ‘লিহাফ’ বইটা দিয়া। যিনি আমারে বইটা দিছিলেন, তিনি চাইতেন আমি ইসমতরে শুধু মান্টোর সমসাময়িক কেউ হিসেবে না চিইনা আলাদা একজন লেখক হিসেবে চিনি। আলাদা একটা এনটিটি। সেই চেনার জার্নির জের ধইরাই এই ইন্টারভিউর কাছে আসা। উনি এইখানে অনেক কথার জবাব দিছেন নিজের মতো কইরা, আবার অনেক জায়গায় হয়তো ঘুরায়া ফিরায়া একই কথা কইছেন। সেই একই কথা কওয়াটা আমার কাছে তার একটা জেদ মনে হইছে। তার লেখাগুলার মতোই, তার আলাপের মাঝেও সেই জেদটা এড়ায় যাওন যায় না। তিনি নিজেই নিজেরে বারবার বেমানান হিসাবে তুইলা ধরছেন। তিনি কখনো কোনো সংগঠনে টিকতে পারেন নাই কেন– সেইটার কারণ হিসাবেও তিনি তার অতি খোলামেলা হওয়ার স্বভাবটারে আগায় রাখছেন। ইসমত খোঁচা দিতে জানেন। তার লেখাতেও, ইন্টারভিউতেও। সেই খোঁচা দেয়ার জন্য সাহস দরকার হয়, আর সেই সাহস তার ছিল। তবু কেন তিনি লিহাফের পর থাইকা লেখায় আগের মতো খোলামেলা হইতে পিছপা হইছেন, সেইটা আমার মাথায় ঢোকে নাই। তাইলে কি তার সাহসেরও একটা পরিসীমা ছিল? এই ইন্টারভিউর অনেক জায়গায় তারে কিছু কিছু বিষয়ে, বিশেষ কইরা সাহিত্যের দিকটায় পিউরিটান বইলা ভুল হইতে পারে। মনে হইতে পারে, তিনি বেশ কিছু লেখারে হালকা বা সস্তা বইলা উড়ায় দিতে চাইছেন। তবে পুরাটা পড়লে খেয়াল হয়, হয়তো তিনি সবসময় এক্সিলেন্সের দিকে ছুটতে চাইছেন। নিজের লেখার ক্ষেত্রেও, অন্যের লেখার পাঠক হিসাবেও। তার নিজেরে নিয়া একটা অন্যরকম অহঙ্কার ছিল। কিন্তু অহঙ্কারটা তারে কখনো ‘বড় লেখক’ হইবার তকমাতে রাখে নাই তার নিজের কাছেই। তিনি বরং অন্যরকম কেউ হয়ে বেশি ভালো ছিলেন। লেখার সাবজেক্টের জন্য তিনি কল্পনার আশ্রয় কম নিছেন, বরং আশপাশ দেখার চোখটারে ঘষামাজা কইরা তুলছেন। চেনা গণ্ডি, চেনা মানুষগুলা বাইরের পরত ছাইড়া তার লেখায় ধরা দিছে। নিজের মায়ের কাছ থাইকা পাওয়া অনাদর তারে প্রথম বুঝাইছে, নারীর মা বা স্ত্রী হওয়া ছাড়া একটা আলাদা পরিচয় আছে, ভাবনার জগত আছে।