যে বাস্তবতা-বিচ্যুত শিক্ষা শ্রমকে, সাধারণ মানুষকে অবজ্ঞা করতে শেখায় এবং একই সঙ্গে দেশের স্বল্প সংখ্যক মানুষকে বিশাল শ্রমজীবী জনসাধারণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে বিরুদ্ধ শিবিরে নিয়ে যায়— তাই তো হল প্রকৃত কুশিক্ষা...’’। বইটির শুরুতেই স্পষ্ট করে বেঁধে দিয়েছেন লেখক, পরতে পরতে দেখিয়েছেন শিক্ষার জনবিরোধী চরিত্র তৈরির ধারাবাহিক ঔপনিবেশিক প্রয়াসের ইতিবৃত্ত। তার পরিপ্রেক্ষিতে যেমন ছিল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণের ইতিহাস, তেমনই গুরুত্বপূর্ণ সেই শাসনের সহযোগী আত্মপ্রতিষ্ঠাকামী এ দেশীয় মধ্যশ্রেণির মানুষের ভূমিকা আর অন্য দিকে শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের ঔপনিবেশিকতা-বিরোধী সংগ্রামের নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহ। যেমন, ১৮৩৫ সালের মধ্যেই জাঁকিয়ে বসেছিল হিন্দু কলেজ, শ্রীরামপুর মিশনারি ও আলেকজ়ান্ডার ডাফের স্কুল। ইংরেজিশিক্ষার ইপ্সিত প্রভাব ফুটে উঠতে লাগল বিদেশি শিক্ষায় আলোকপ্রাপ্ত তরুণদের মধ্যে। শাসক ও শাসিতের যোগসাজশে প্রমাণিত হয়ে গেল ইংরেজের মহৎ উদ্দেশ্য, ‘ভারতবাসীদের উদ্ধার করা’। অথচ, এরই মধ্যে ব্রিটিশ শোষণে জর্জরিত সাধারণ মানুষ, কৃষক সমাজ অন্তত ১২টি ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষের কবলে পড়েছে, মৃত্যু হয়েছে কয়েক কোটি মানুষের। ধ্বংস হয়েছে স্বাধীন বাণিজ্য, শিল্পসম্পদ। কম করে ২৭টি ক্ষেত্রে বিদ্রোহী কৃষকরা সশস্ত্র সংগ্রামে নেমেছেন। এর পরে এসেছে মেকলের মিনিট, মুসলমান সমাজে ইংরেজি শিক্ষা, নারীশিক্ষা সংক্রান্ত নথিপত্র ইত্যাদি। দু’দশক পরে নতুন সংস্করণে এল মূল্যবান বইটি।