বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনে শক্তি, সাহস, পরামর্শ দিয়ে যিনি পাশে থেকেছেন, অভয় দিয়েছেন, তাঁর অবর্তমানে দল ও পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন, তিনি বঙ্গবন্ধুর আবাল্য সাথী, বন্ধু ও স্বজন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব।
তেমনি শেখ রেহানাও পিতার স্বপ্ন পূরণে মায়ের মতোই বড় বোনের পাশে থেকে শক্তি, সাহস, পরামর্শ ও প্রেরণা যুগিয়ে চলেছেন অবিরত--নীরবে-নিভৃতে নেপথ্যের কারিগর রূপে। মায়ের মতোই সর্বংসহা আত্মবিমুখ তিনি। মা যেমন জীবনের বেশিরভাগ সময় কণ্টকাকীর্ণ, বন্ধুর ও সংগ্রামী জীবন কাটিয়েছেন তিনিও তেমনি। যেন মায়ের অবিকল প্রতিচ্ছবি।
তাই তো, বঙ্গবন্ধু হত্যার তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক কমিশন গঠনের উদ্দেশ্যে শেখ রেহানা যখন হাউস অব কমন্সে স্যার উইলিয়াম টমাস এমপি, কিউসি-র সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন, টমাস উইলিয়াম এমপির মন্তব্য ছিল এরকম-- ‘দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছিল, যেন বেগম মুজিব হেঁটে আসছেন।’
উল্লেখ্য, টমাস উইলিয়াম এমপি ১৯৬৯ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর প্রধান আইনজীবী হিসেবে ঢাকায় এসেছিলেন এবং মামলা সংক্রান্ত আলোচনার জন্য প্রায়ই বঙ্গবন্ধু ভবনে বঙ্গমাতার সাথে দেখা করতেন।
‘শেখ রেহানার যাপিত জীবন’ আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ও সাধনার ফসল। বইটিতে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সবচেয়ে প্রচারবিমুখ সন্তানের জন্ম থেকে অদ্যাবধি বিভিন্ন বিষয় অত্যন্ত যত্নের সাথে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমি মনে করি, বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা ও তাঁদের সন্তানরা বাঙালি জাতির জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন তা ইতিহাসে একেবারেই বিরল। তাঁদের আত্মত্যাগ ও সংগ্রামী জীবনের কাহিনি শক্তি, সাহস ও প্রেরণার উৎস। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সে ইতিহাস ছড়িয়ে দেয়া আমাদের প্রজন্মের নৈতিক দায়িত্ব। আর এই নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকেই আমার এ প্রয়াস। পাঠক, বিশেষ করে, নতুন প্রজন্ম যদি ‘শেখ রেহানার যাপিত জীবন’ পাঠ করে কিছুটা হলেও একজন সংগ্রামী, সংযমী, আত্মপ্রত্যয়ী মহীয়সী ব্যক্তিত্বের সম্পর্কে জানতে পারে ও অনুপ্রেরণা পায় তাহলেই আমার কষ্ট লাঘব হবে।