জীব জগতে আমাদের প্রজাতিটির নাম হােমাে সেপিয়েন্স। নিজেদের এই নাম নিজেরা আমরা দিয়েছি - যার অর্থ ‘জ্ঞানী আমরা’। এই প্রজাতি হিসেবে আমরা আছি গত প্রায় দেড় লক্ষ বছর ধরে। তবে মানুষ হিসাবে আমাদের ইতিহাস আরাে অনেক প্রাচীন, কারণ আমাদের এই প্রজাতির উদ্ভব হয়েছে তার পূর্বসূরি অন্য প্রজাতি থেকে - যারাও ছিল ভিন্নতর মানব প্রজাতি যাদেরকে আমরা ‘জ্ঞানী’ বলতে রাজী নই। তারাও আবার বিবর্তিত হয়েছিল আরাে প্রাচীন মানব-সদৃশদের থেকে। নিজেদের এই অতীত ইতিহাস আমাদের জন্য অত্যন্ত কৌতূহলােদ্দীপক। আমাদের প্রজাতি হােমাে সেপিয়েন্সের উদ্ভব পূর্ব আফ্রিকায়। সেখান থেকে মাত্র ৮০ হাজার বছর আগে বের হয়ে আমরা পৃথিবীময় ছড়িয়েছি। আমাদের আগের বেশ ক'টি মানব প্রজাতির উদ্ভবও আফ্রিকাতেই, তারাও পরে নানা মহাদেশে বিস্তৃত হয়েছিল। কালক্রমে অন্য মানব প্রজাতিগুলাে বিলুপ্ত হয়ে গেছে, শুধু আমাদেরটিই রয়েছে, যদিও মাত্র ৩০ হাজার বছর আগেও আমরা তাদের কোন কোনটির সঙ্গে সহঅবস্থান করেছি। এই চমকপ্রদ ইতিহাসের অনেকখানি আমরা জানতে পেরেছি ফসিল ও হাতিয়ার গবেষণা থেকে। এখন আরাে নিশ্চয়তার সঙ্গে চমৎকার সব তথ্য উঘাটন করছে আধুনিক ডিএনএ গবেষণা। ডিএনএ-কে অনুসরণ করেই আমরা আমাদের আফ্রিকান উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছি, আমাদের পূর্বসূরিদের প্রকৃতি, অভিবাসন, এমনকি জীবনযাত্রা সম্পর্কেও আরাে অনেক ভাল করে জানছি। জীব জগতে বুদ্ধির অভিযাত্রায় মানুষের উদ্ভব, বিকাশ, এবং সভ্যতার উন্মেষ প্রাণের ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায়।
মুহাম্মদ ইব্রাহীম (জন্ম: ১ ডিসেম্বর, ১৯৪৫) বাংলাদেশী পদার্থবিজ্ঞানী, বিজ্ঞান লেখক এবং বিজ্ঞান সংগঠক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক। তিনি সেন্টার ফর মাস এডুকেশন ইন সাইন্স (সিএমইএস)-এর প্রতিষ্ঠাতা। বাংলাদেশে সাধারণ মানুষ এবং ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণে তার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। সত্তরের দশক থেকেই তিনি এই প্রক্রিয়া শুরু করেন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল বিভিন্ন স্থানে বিজ্ঞান চর্চার গ্রামীণ আনন্দ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা। এর একটি টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর উপজেলায় অবস্থিত। তিনি বিজ্ঞান সাময়িকী নামক একটি মাসিক বিজ্ঞান মাসিকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। তার আরেকটি পরিচয় তিনি ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূসের ভাই। ২০০৬ সালে তাকে জনপ্রিয় বিজ্ঞান সাহিত্যের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার দেয়া হয়।