আমাদের মন্ত্রীদের আশা আমরা অচিরেই সিঙ্গাপুর, কানাডাকে ছাড়িয়ে যাব, বিশ্বপর্যটক ভেনিস না গিয়ে ঢাকায় আসবে। যাঁরা তাঁদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তাঁরা আশঙ্কার কথা বলেন। তাঁরা ঘোষণা করেন বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হওয়ার দ্বারপ্রান্তে।
মাহমুদ রেজা চৌধুরীর আশা-আশঙ্কার বাংলাদেশ অতিকথন-দোষে দুষ্ট আশাও নেই, আবার ঘন কালো মেঘের আশঙ্কাও প্রকট নয়, তবে সতর্কতা আছে।
১৯৭১-এ স্বাধীন বাংলাদেশ অর্ধশতক কিছুটা উত্থান ও কিছুটা পতনের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করেছে। কখনো কখনো স্বৈরাচার ও গণতন্ত্রের মধ্যে যে বিস্তর ফারাক, তা ঢেকে রাখা হয়। লেখকের ভাষায় ‘অতি সাধারণ দৃষ্টিতে, ইতিহাস কখনো সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ হয় না, ইতিহাসও পক্ষপাতদুষ্ট। প্রত্যেক পক্ষই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। অন্যায়ের, ভণ্ডামির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অর্থ নিজেদের অস্তিত্ব জ্ঞাপন করা। নীরবতা একধরনের প্রশ্রয়, যা সুশীল ভণ্ডদের ধর্ম। আর এ কারণে তা অন্যায়’।
মাহমুদ রেজা চৌধুরী চেষ্টা করেছেন নির্মোহভাবে বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাস রচনা করতে। তিনি নিজে সমাজবিজ্ঞানী এবং দক্ষ সমাজবিশ্লেষক। দল ও মতের দাস না হয়ে মুক্তমনে যদি পাঠক বাংলাদেশকে জানতে চান, এই বইটিই হবে সবচেয়ে সহায়ক।
জনন্ম ১৯৫৭ সালে বরিশালে। মা আক্তারী বেগম ও বাবা হোসেন রেজা চৌধুরী এর একমাত্র পুত্র সন্তান মাহমুদ রেজা চৌধুরী ১৯৮১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। ছাত্র রাজনীতি ও জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ না করলেও তিনি সমাজ ও রাজনীতি বিষয়েই প্রধানত লেখেন। ১৯৮৬ সাল থেকে শুরু করে প্রায় দু'যুগেরও বেশী সময় ধরে রাজনীতি বিশ্লেষক, দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী জনাব চৌধুরী দেশে-বিদেশের সুপ্রতিষ্ঠিত ও সুপরিচিত পত্র-পত্রিকায় লিখে আসছেন। তার লেখার প্রেক্ষাপট আমাদের ক্ষয়িষ্ণু মূল্যবোধ, রাজনৈতিক সচেতনতা, সমাজতাত্বিক দৃষ্টিকোণের উপস্থাপন এবং বিশ্লেষণ। লেখকের কাথায় লেখালেখি হচ্ছে "নিজের প্রতি তার সামাজিক দায়িত্ববোধ চর্চার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা"। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকাকালিন তিনি ডাক্স বিতর্ক প্রতিযোগিতা এবং জাতীয় টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় এস. এম হলের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং শ্রেষ্ঠ বক্তার সম্মানও অর্জন করেন। এক সময়ে জাতীয় বেতারের সংবাদ পাঠক ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় খ্যাতি অর্জনকারী জনাব চৌধুরী ১৯৯৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে "মুক্ত ফোরাম" নামে একটি সামাজিক থিংক ট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ভয়েস অব আমেরিকার একজন অনিয়মিত কন্ট্রিবিউটর। পেশাগত জীবনে তিনি সুদীর্ঘকাল আন্তর্জাতিক ও বহুজাতিক শিপিং কর্পোরেশনে সেলস্ মার্কেটিং এবং মানব সম্পদ উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত ছিলেন।