প্রাণিজগতে আমাদের যে প্রজাতি তার বৈজ্ঞানিক নাম নিজেরা দিয়েছি হোমো সেপিয়েন্স অর্থাৎ 'জ্ঞানী মানুষ'। অন্য সব প্রজাতিকে ছাড়িয়ে যে অনন্যতা আমরা লাভ করেছি তার বড় প্রকাশ উচ্চতর চিন্তার ক্ষমতা, এবং বিজ্ঞানের মাধ্যমে মহাবিশ্বকে উদঘাটনের চেষ্টা করার আগ্রহ ও সক্ষমতা। নিজেদের ভূত-ভবিষ্যৎ নিয়ে আত্মঅনুসন্ধানও এই উদঘাটন চেষ্টার অন্তর্ভূক্ত। আমরা কারা, কোথা থেকে এসেছি, কেমন করে চিন্তা করি, অন্য সবকিছুর সঙ্গে আমাদের কী রকম সম্পর্ক, ভবিষ্যতে কী সংকট ও কী সম্ভাবনাগুলো আসতে পারে- বিজ্ঞান এ সব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং এখন উত্তরগুলোকে সূক্ষ্মভাবে প্রমাণিত করতে পারছে। সামনে যে তা আরো শাণিত হবে তাও স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। এই পুস্তকমালা এসবকেই সবার জন্য সহজভাবে পরিবেশন করার প্রয়াস নিয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে লেখক এ বিষয়গুলো নিয়ে ধারাবাহিকভাবে কিছু বিজ্ঞান-বক্তৃতা দিয়েছেন সর্ব-সাধারণের জন্য। 'সবার জন্য সর্বশেষ বিজ্ঞান' নামের এই বক্তৃতাগুলো প্রতি মাসে ঢাকাস্থ বৃটিশ কাউন্সিল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং চ্যানেল আই কর্তৃক টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হয়েছে। পুস্তকমালার বইগুলো তার ভিত্তিতেই রচিত। একেবারেই সাম্প্রতিক বিজ্ঞান এসব নিয়ে আমাদের জ্ঞানের সীমান্তটি যেখানে এনে দিয়েছে, সকল জটিলতা সত্ত্বেও তাকেই সহজ ভাষায় উপভোগ্য করার চেষ্টা এতে রয়েছে।
মুহাম্মদ ইব্রাহীম (জন্ম: ১ ডিসেম্বর, ১৯৪৫) বাংলাদেশী পদার্থবিজ্ঞানী, বিজ্ঞান লেখক এবং বিজ্ঞান সংগঠক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক। তিনি সেন্টার ফর মাস এডুকেশন ইন সাইন্স (সিএমইএস)-এর প্রতিষ্ঠাতা। বাংলাদেশে সাধারণ মানুষ এবং ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণে তার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। সত্তরের দশক থেকেই তিনি এই প্রক্রিয়া শুরু করেন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল বিভিন্ন স্থানে বিজ্ঞান চর্চার গ্রামীণ আনন্দ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা। এর একটি টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর উপজেলায় অবস্থিত। তিনি বিজ্ঞান সাময়িকী নামক একটি মাসিক বিজ্ঞান মাসিকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। তার আরেকটি পরিচয় তিনি ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূসের ভাই। ২০০৬ সালে তাকে জনপ্রিয় বিজ্ঞান সাহিত্যের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার দেয়া হয়।