সকালের সোনালি রোদ জ্বলমল করছে। অনেক দিন পর কুয়াশাচ্ছন্ন প্রকৃতি আজ একটু হেসে ওঠেছে। বাইরে রোদের দিকে তাকিয়ে কুলসুমের শুধু ছেলের কথা মনে পড়ছে। সবসময় ছেলে বাড়ির বাইরে থাকলে ছেলের জন্য মন খারাপ হলেই ছেলের জামা—কাপড় নাড়াচাড়া করে দেখত, কোনোটাতে ময়লা থাকলে ধুয়ে দিত কিংবা রোদ লাগিয়ে আবার উঠিয়ে রাখত।
আজকের সকাল বেলার এই সুন্দর ঝকঝকে রোদ দেখে কুলসুম বৃন্তের পরিধানের সকল জামা বাড়ির উঠানে রোদে দিয়েছে। একেবারে বৃন্তের শিশু বয়স থেকে এ যাবৎ যত জামা ব্যবহার করেছে
সবগুলোকে রোদে শুকাতে দিয়ে উঠানের কিনারে আমগাছের নিচে বসে একটু বিশ্রাম নিচ্ছেন। এমন সময় প্রতিবেশি জমির উদ্দিনের বউ ফুলনেছা তাদের বাড়িতে এল বৃন্তের খোঁজ—খবর নিতে। পাড়া— প্রতিবেশিরাও কিছুটা ধারণা করতে শুরু করেছে যে এই সময়ে বৃন্ত বাড়িতে থাকার কথা ছিল, কিন্তু কোথাও বেড়াতে গিয়ে নাকি আর আসছে না, সঠিক কোনো খোঁজও নাকি পাচ্ছে না। ফুলনেছা কুলসুমকে উদ্দেশ্য করে বলে, কৈগ বৃন্তের মা, ফুতের মুতের কেথাঁ বিছনাও যত্ন কইরা তুইল্যা রাখছ দেহি, অহনও ইতা রইদ লাগাও? উডান ভইরা উদা ফুতের জামা—কাফরই দেখতাছি।
আহারে ফুতের পুরান জামা—কাফরের মায়াও বুঝি ছাড়তে ফার না? ঘর থেকে রং মিয়া বের হয়ে এসে বলে, চাচি, বৃন্তের মারে একটু বুঝাও, একটা আলমারি ভরে রাখছে শুধু পুরান জামা—কাপড় আর পুরান খেলনা দিয়া। ছেলে— মেয়ে এ যাবৎ যা ব্যবহার করছে সবই তুইল্যা রাখছে। আমরার কি আর ঝি—পুত অইব যে এগুলো পরানো যাইব? কুলসুম ফুলনেছাকে বসার একটা পিরি দিয়ে বলে, আসলে চাচি পুতটা বাড়িতে থাহে না তো, তাই এর সবকিছু তুইল্যা রাহি। এর কথা মনে অইলে আলমারি খুইল্যা দেহি। এইগুলি দেখলে মনে হয় পুত আমার অমহেই আছে।
আহারে মায়ের মন! মায়ের মায়া জুইড়া খালি ফুত আর ফুত। তা তোমার ফুত অহন কই? ওনছিলাম পড়ালেহা শেষ অইচে, বড় চাহরি বাহরি করব, অহন বুঝি বাড়িতঅই আয়ে না? তা কোনো খোঁজ—খবরও বুঝি অহনও পাও নাই?