আকাশের তারাগুলো নিভে রয়েছে। মেঘের চাদরে চাঁদটাও ঢাকা পড়ে গেছে। ওইপাড়ের হাইওয়ে ধরে দুরন্ত বাতাস উড়ে এসে ঝাপটা দিয়ে যাচ্ছে। ভ্যাপসা গন্ধের কালচে পানিতে হাত ডুবিয়ে জলকেলিতে ব্যস্ত বৃষ্টি হঠাৎ করে প্রশ্ন করল, -- বল তো হিরো, আজ রাতে বৃষ্টি হবে কি না! ওর নামটা আজও ঠিক করে বলেনি বৃষ্টি। হিরু বিরক্ত কন্ঠে বলল, -- মেঘ জমে নাই ভালোমতো। বৃষ্টি হবে না। -- কিন্তু আমার মন বলছে বৃষ্টি হবে। -- হোক। তাতে কী? ঘাট দেবো? -- তুই একটা লাফ দিয়ে সাঁতরে সাঁতরে ওপারে চলে যেতে পারবি না? -- পারব না কেন? অবশ্যই পারব! -- তাহলে চলে যা! হিরু নেমে গেল নৌকা থেকে। মরা নদীটাতে অন্যসময় হাঁটুপানি থাকে। কয়েকদিন ধরে কয়েকবার বেশ ভালোরকম বৃষ্টি হওয়ায় এখন গলা ডুবে যায়। গলা পানিতে দাঁড়িয়ে হিরু জানতে চাইল, -- কখন আইতাম তোরে নিতে? -- ওই পাড়ে আরেকটা ডিঙি নিয়ে বসে থাকবি। একজন আসবে। তাকে নিয়ে এখানে চলে আসবি আবার। পারবি না? -- পারব। নৌকাটা বাইন্ধা থুয়ে যাই তাইলে। নইলে নাও ভাইসা যাইব! – ভেসে যাওয়া নৌকা খুঁজে বের করবি। আমার ভাসতে ভালো লাগছে। হিরু পাড়ে ফেরার জন্য সাঁতার শুরু করার আগে জানতে চাইল, -- কে আসবে, বৃষ্টি? বৃষ্টি উত্তর দিলো না। সব অপেক্ষা কষ্ট দেয় না, কিছু কিছু অপেক্ষা হয় সুন্দর। কিছু অপেক্ষা হয় আনন্দের! মায়ের জঠর থেকে বেরিয়ে নবজাতকের প্রথম কান্নার জন্য অপেক্ষা, বীজ অঙ্কুরিত হয়ে নতুন পাতাটির মাথা দোলানোর জন্য অপেক্ষা, রাত কেটে ভোরের আলো ফোটার জন্য অপেক্ষা, গুমোট ধরে জমে থাকা অন্ধকার মেঘ সরিয়ে দিয়ে আকাশভাঙা বর্ষার জন্য অপেক্ষা, প্রিয় মানুষের জন্য অপেক্ষা! আমরাও বরং দুচোখে আগ্রহ নিয়ে এমনই এক অপেক্ষা করি বৃষ্টির সাথে সাথে, আনন্দময় সুন্দর অপেক্ষাটা!
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘টুইটুবানির ফুল’ নামের পাঠকপ্রিয় ধারাবাহিক বড়গল্প দিয়ে লেখালেখির শুরু ১৯৮৮ সালে খুলনায় জন্ম নেওয়া আফসানা আশা’র। পড়াশোনা ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে, ভালোবাসার জায়গাও সাহিত্য। ব্যক্তিগত জীবনে এক কন্যাসন্তানের জননী। নিজেকে রঙধনুর মাম্মাম বলে পরিচয় দিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।