দ্য রেইপ অব বাংলাদেশ এই কথাটুকুর ভালো বাংলা করলে দাঁড়ায়, বাংলাদেশের সর্বনাশ।
আসলেই তাই! ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয়ে ভারতীয় উপমহাদেশ যে মুক্তির আনন্দ সরোবরে অবগাহন করেছিলো, তা পুরো ভারতবর্ষের জন্য আনন্দের থাকেনি। বিশেষ করে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকরা পূর্ব পাকিস্তানের জন্য ছিলো কেবলই শোষক।
স্বাধীনতার অধরা স্বপ্নটা তাই অধরাই থেকে গিয়েছিলো। এক দিকে স্বাধীনতার স্বপ্ন, অন্য দিকে পশ্চিম পাকিস্তানিদের অনাচার, বৈষম্য এবং অবহেলা। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ তাই আর চুপ করে থাকেনি। স্বাধীকার ও স্বদেশের মুক্তির দাবিতে বাংলাদেশ হয়ে ওঠে এক অগ্নিগর্ভ ভূমি।
মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিরা ঠিক কী পরিমাণ বর্বরতা চালিয়েছিলো, এবং ঠিক কোন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ জীবন বাজি রেখে নেমে পড়েছিলো যুদ্ধের ময়দানে, সেই ঘটনার প্রামাণ্য দলিল অ্যান্থনি মাস্কেরানহাসের এই গ্রন্থ।
‘৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান থেকে পাকিস্তানের মিলিটারি ব্যুরোক্রেটিক এলিটের চরিত্র, আইয়ুব, ইয়াহিয়া ও ভুট্টোর ক্ষমতার লোভ, আওয়ামী লীগের ৬ দফা, ছাত্র জনতার ১১ দফা, '৭০ এর নির্বাচন ও পরবর্তী রাজনৈতিক টানাপোড়েন, নিরস্ত্র বাঙালির ওপর গণহত্যা ও প্রবাসী সরকার গঠন ইত্যাদির বিস্তারিত বিবরণ আছে 'দ্য রেইপ অব বাংলাদেশ' বইটিতে।
দ্য রেইপ অব বাংলাদেশ বইটির অধ্যায়ে অধ্যায়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের আলোচনা অত্যন্ত সতর্কভাবে এবং নির্ভরযোগ্যভাবে তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আগ্রহী যে কোনো পাঠকের তৃষ্ণা মেটাবে এই বই, এবং বইটি বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে আগ্রহী মানুষের জন্য একটি অবশ্যপাঠ্য বইও বটে।
নেভিলে অ্যান্থনি মাসকারেনহাস (ইংরেজি: Neville Anthony Mascarenhas; জন্ম: ১০ জুলাই, ১৯২৮ - মৃত্যু: ৬ ডিসেম্বর, ১৯৮৬) দক্ষিণ এশিয়ার বিশিষ্ট সাংবাদিক ও লেখক ছিলেন। তাঁর পুরো নাম নেভিল অ্যান্থনি ম্যাসকারেনহাস। তিনি ভারতের গোয়ায় জন্মগ্রহণ করেন এবং পড়াশোনা করেন পাকিস্তানের করাচিতে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময় তিনি বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যা ও অন্যান্য ঘটনা পর্যবেক্ষণপূর্বক বিশ্ববাসীর কাছে সর্বপ্রথম উন্মোচিত করেন। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে লিখেন যা বাংলাদেশের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে সচেতন করে তুলতে সাহায্য করেছিল। এ বিষয় নিয়ে তিনি বইও লিখেছেন। তিনি ব্রিটেনের দ্য সানডে টাইমস পত্রিকায় ১৪ বছর কাজ করার পর ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে জীবন অতিবাহিত করেন।